ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে শিশুদের চিকিৎসা বন্ধের আশঙ্কা! তোলপাড়

ট্রাম্প প্রশাসনের একটি নতুন স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিবেদনে লিঙ্গ পরিবর্তন করতে আগ্রহী তরুণ-তরুণীদের জন্য ব্যাপক হারে চিকিৎসা পদ্ধতির পরিবর্তে কাউন্সেলিংয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জেন্ডার ডিসফোরিয়া’ (gender dysphoria) -র শিকার তরুণদের জন্য হরমোন থেরাপি বা অস্ত্রোপচারের মতো পদক্ষেপের পরিবর্তে মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসার (psychotherapy) দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।

প্রায় ৪০০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে ‘ওয়ার্ল্ড প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর ট্রান্সজেন্ডার হেলথ’ (World Professional Association for Transgender Health) -এর দেওয়া চিকিৎসা পদ্ধতির মান নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার লিঙ্গ পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত একটি বিশেষ গোষ্ঠীর চিকিৎসা বিষয়ক ধারণাকে নতুনভাবে সাজাতে চাইছে, যা এরই মধ্যে রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

তবে, এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন প্রধান চিকিৎসা বিষয়ক সংগঠন এবং ট্রান্সজেন্ডার রোগীদের চিকিৎসা করেন এমন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা এই নতুন প্রতিবেদনটিকে ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিচালক ড. জয় ভট্টাচার্য এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমাদের শিশুদের রক্ষা করাই প্রধান কর্তব্য। কোনো পরীক্ষিত এবং অপরিবর্তনীয় চিকিৎসা পদ্ধতির দিকে তাদের ঠেলে দেওয়া উচিত নয়। বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির পাশাপাশি আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, কোনো বিশেষ এজেন্ডা অনুসরণ করা যাবে না।”

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কিশোর-কিশোরীরা যেহেতু জীবন পরিবর্তনকারী চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো যথেষ্ট পরিণত নয়, তাই তাদের এই ধরনের চিকিৎসা দেওয়া উচিত নয়। কারণ, এর ফলে তারা ভবিষ্যতে সন্তান জন্মদানে অক্ষম হতে পারে। এছাড়া, ইংল্যান্ডের একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিবেদনের কথাও এতে উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, গবেষণাগার ছাড়া অন্য কোথাও বয়ঃসন্ধিকালীন (puberty) হরমোন সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া উচিত।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধুমাত্র কাউন্সেলিংয়ের উপর জোর দেওয়া হলে তা উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, এই ধরনের থেরাপি অনেক সময় রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

প্রতিবেদনে ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক চিকিৎসা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসার নামে রোগীদের ভুল বোঝানো হচ্ছে। এছাড়াও, রোগীদের লিঙ্গ বা যৌন অভিমুখিতা পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও, এই ধরনের ‘রূপান্তরকামী চিকিৎসা’ (conversion therapy) বর্তমানে অনেক দেশেই নিষিদ্ধ।

তবে, চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ তরুণ-তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ (HHS) জানিয়েছে, এই প্রতিবেদনে প্রাপ্তবয়স্কদের চিকিৎসার বিষয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। এটি কোনো ক্লিনিক্যাল গাইডলাইনও নয়। তবে, এতে নীতিনির্ধারক, চিকিৎসক, থেরাপিস্ট, চিকিৎসা বিষয়ক সংগঠন, রোগী এবং তাদের পরিবারকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

ন্যাশনাল সেন্টার ফর লেসবিয়ান রাইটস-এর আইন পরিচালক শ্যানন মেন্টার বলেছেন, “এই প্রতিবেদন পরিবার এবং চিকিৎসা প্রদানকারীদের মধ্যে ভীতি তৈরি করতে পারে। ফেডারেল সরকার চিকিৎসা বিজ্ঞানে রাজনীতি ও আদর্শকে যুক্ত করছে, যা খুবই উদ্বেগজনক।”

অন্যদিকে, আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (AMA) -এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তরুণদের জন্য লিঙ্গ-নিশ্চিতকরণ চিকিৎসা (gender-affirming care) বন্ধ করা উচিত নয়। কারণ, গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে কোনো বাধা নেই।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন ‘আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স’-এর প্রেসিডেন্ট ড. সুসান ক্রেসলি। তিনি বলেছেন, “এই প্রতিবেদন চিকিৎসা বিষয়ক বর্তমান ধারণাগুলোকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে এবং শিশুদের চিকিৎসা বিষয়ক বাস্তবতাকে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে।”

নিউ ইয়র্কের মনোবিজ্ঞানী ও মন:বিশ্লেষক ড. জ্যাক ড্রেসচার-এর মতে, এই প্রতিবেদনটি একপেশে। কারণ, এতে চিকিৎসার ঝুঁকিগুলো বড় করে দেখানো হয়েছে, কিন্তু সুবিধাগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক চিকিৎসায় কাউন্সেলিং একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

তথ‌্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *