ট্রাম্পের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিশ্রুতি: কতটা সত্য?

ট্রাম্পের ‘স্বাস্থ্যকর আমেরিকা’ গড়ার ঘোষণার বিপরীতে নীতি: স্বাস্থ্যখাতে কাটছাঁট নিয়ে বিতর্ক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই ‘মেক আমেরিকা হেলদি এগেইন’ (MAHA) বা ‘স্বাস্থ্যকর আমেরিকা’ গড়ার কথা বলতেন। তিনি শিশুদের ক্যান্সার নির্মূল করার অঙ্গীকারও করেছিলেন।

কিন্তু তার প্রশাসন স্বাস্থ্যখাতে এমন কিছু নীতি গ্রহণ করেছে যা তার এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বরং স্বাস্থ্যখাতে অর্থ বরাদ্দ কমানো এবং কর্মীদের ছাঁটাইয়ের মতো পদক্ষেপের কারণে তার এই অঙ্গীকারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ট্রাম্পের এই নীতির একটি বড় দিক হলো স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ (HHS)-এ কর্মী ছাঁটাই। এই বিভাগের অধীনে থাকা রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC), জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (NIH) এবং খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (FDA)-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাতেও কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে।

এর ফলে ক্যান্সার, আলঝেইমার রোগ এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক গবেষণা এবং কর্মসূচিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত ৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ কমানো হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় সরকারের সক্ষমতা কমে যাবে। উদাহরণস্বরূপ, টেক্সাসে হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সেখানকার স্বাস্থ্য বিভাগ কর্মী সংকটের কারণে তা নিয়ন্ত্রণে সমস্যায় পড়েছে।

এছাড়াও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়াটাও উদ্বেগের কারণ। কারণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক হুমকি শনাক্ত করে এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করে থাকে।

ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, এই কর্মী ছাঁটাই এবং অর্থ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সরকারি অফিসের অপ্রয়োজনীয়তা দূর করার জন্য। তাদের মতে, এর ফলে স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের কার্যকারিতা বাড়বে।

তবে সমালোচকরা বলছেন, এর ফলস্বরূপ আমেরিকার মানুষের স্বাস্থ্য আরও খারাপ হতে পারে। বিশেষ করে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবে।

এছাড়াও, ট্রাম্প প্রশাসন এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যা স্বাস্থ্য বীমা এবং স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ কমানোর ইঙ্গিত দেয়। উদাহরণস্বরূপ, মেডিকেইড প্রোগ্রামের দুর্বল করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

মেডিকেইড হলো একটি ফেডারেল-রাজ্য যৌথ কর্মসূচি, যা প্রায় ৭২ মিলিয়ন আমেরিকানকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয়।

স্বাস্থ্যখাতে ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতিগুলো একদিকে যেমন স্বাস্থ্যকর আমেরিকা গড়ার ঘোষণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তেমনি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগের কারণ। তারা মনে করেন, এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *