ট্রাম্পের ক্ষমতার দাপট: ডেমোক্রেট বিচারককে হেগসেথের আক্রমণ!

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসনের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আবারও সরগরম আন্তর্জাতিক অঙ্গন। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন এবং কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি সামরিক বাহিনীর একজন বিচারকের সমালোচনা করা হয়েছে। ঐ বিচারক রূপান্তরকামীদের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন। দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা পিট হেগসেথ, যিনি প্রকাশ্যে ঐ বিচারককে ব্যঙ্গ করেছেন। হেগসেথ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচারককে ‘কমান্ডার রেইস’ বলে সম্বোধন করেন এবং তাঁর সামরিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেন। উল্লেখ্য, বিচারক আনা রেইসকে ডেমোক্রেট দলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিয়োগ করেছিলেন।

এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলায় দেশটির একটি বড় আইনি firm-কেও আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এক চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্টের নীতির সমালোচনা করলে, ট্রাম্পের উপদেষ্টারা এর সুযোগ নেন। এমনকি, প্রতিষ্ঠানটিকে ট্রাম্পের সমর্থিত বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য আগামী চার বছরে প্রায় ৪০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়ার কথা বলতে হয়েছে। এছাড়া, অভিবাসন বিষয়ক মামলাসহ সরকারের বিরুদ্ধে আনা মামলাগুলোর ক্ষেত্রে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যারা কাজ করছে, এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বয়কট করার পরিকল্পনা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক নাগরিক। একটি জরিপে দেখা গেছে, প্রতি পাঁচ জন আমেরিকানের মধ্যে একজন এমন প্রতিষ্ঠানের পণ্য বর্জন করতে প্রস্তুত। অ্যামাজন, টার্গেট এবং টেসলার মতো বড় ব্র্যান্ডগুলোও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে পারে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পরেও বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছেন। তিনি সম্প্রতি সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, জো বাইডেনসহ ডেমোক্রেট দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সদস্য এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নিরাপত্তা বিষয়ক অনুমোদন বাতিল করেছেন। সাধারণত, সরকারি দায়িত্ব থেকে অবসর নেওয়ার পর সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং কর্মকর্তাদের এই সুবিধা দেওয়া হয়।

এছাড়াও, অভিবাসী শিশুদের জন্য আইনি সহায়তা দেওয়ার একটি প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধ করারও খবর পাওয়া গেছে। এর আগে, সীমান্তরক্ষীদের অভিবাসী শিশুদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

অন্যদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা শুরুর কথা রয়েছে। এই আলোচনার পরে, মার্কিন প্রতিনিধিদল রাশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠকে বসবে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় উপস্থিত থাকবেন, তবে তাঁরা একই কক্ষে বসবেন না।

যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যখাতে নীতি পরিবর্তনেরও আহ্বান জানানো হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মী ছাঁটাই, তহবিল হ্রাস এবং আদর্শিক গবেষণা পর্যালোচনার মধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনাকে আরও বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে নিয়ে আসার কথা বলা হচ্ছে।

সবশেষে, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটন শিল্পে একটা প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পর্যটন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্রমণকারীদের আটকের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পর্যটকদের সংখ্যা কমে যেতে পারে। জার্মানি তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ নির্দেশিকাও হালনাগাদ করেছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *