ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনকালের প্রথম ১০০ দিনে মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে, এমনটাই বলছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে সতর্ক করে জানিয়েছে, ট্রাম্পের নীতি বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
এর ফলস্বরূপ, বিভিন্ন দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিস্তার ঘটেছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েছে।
প্রতিবেদনে মানবাধিকারের এই ‘অধঃপতন’-এর জন্য জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উপযুক্ত পদক্ষেপের অভাব, ভিন্নমতের উপর দমন-পীড়ন, অভিবাসী ও শরণার্থীদের অধিকার খর্ব করা, নারী, শিশু ও এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের অধিকারের উপর আঘাত হানার মতো বিষয়গুলোকে বিশেষভাবে দায়ী করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, এই বিষয়গুলোর পেছনে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি বিশেষভাবে প্রভাব ফেলেছে।
প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, বিভিন্ন দেশে ভিন্নমতের কণ্ঠরোধ করতে নির্বিচারে ধরপাকড়, গুম এবং হত্যার মতো ঘটনা বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের ছাত্র বিক্ষোভের সময় ‘গুলি করো’ নির্দেশনার ফলে বহু মানুষের মৃত্যু হয়।
মোজাম্বিকের বিতর্কিত নির্বাচনও একইভাবে সহিংস দমন-পীড়নের জন্ম দেয়। এছাড়াও, তুরস্কে বিক্ষোভ প্রদর্শনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
সংস্থাটি সুদানের গৃহযুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সেখানে, দ্রুত প্রতিক্রিয়া বাহিনী (Rapid Support Forces) নারীদের উপর যৌন সহিংসতার মতো ঘটনা ঘটালেও আন্তর্জাতিক মহলে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আরও জানায়, ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক সাহায্য কমানোর সিদ্ধান্ত বিশ্বজুড়ে পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে। এর ফলে ইয়েমেন ও সিরিয়ার মতো দেশগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাদ্য, আশ্রয় এবং স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার মানুষজন।
গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইউরোপে, রাশিয়া ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলা অব্যাহত রেখেছে, যেখানে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর মৃতের সংখ্যা বেড়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, “ট্রাম্প মানবাধিকারের প্রতি চরম অবজ্ঞা দেখিয়েছেন। এর ফলে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার বিরোধী আন্দোলনগুলো আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং কর্পোরেট মিত্রদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে।”
প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং কর্পোরেট ক্ষমতার অপব্যবহারের মতো বিষয়গুলোতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে ট্রাম্পের বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত অন্যদেরও একই পথে উৎসাহিত করবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
এছাড়া, অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর প্রেক্ষাপটে, বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য হ্রাসের গতি কমে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। আফগানিস্তান ও ইরানের মতো দেশগুলোতে নারী, শিশু এবং এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণের ঘটনা বাড়ছে, এবং উগান্ডা, জর্জিয়া ও বুলগেরিয়ার মতো দেশগুলোতে এলজিবিটিকিউ+ অধিকারকে টার্গেট করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান