মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিতর্ক চলছে। অনেকে তাকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিলেও, বিশ্লেষকরা ভিন্নমত পোষণ করেন।
তাদের মতে, ট্রাম্প আসলে হাইপার-ক্যাপিটালিজমের পথে হেঁটেছেন, যা উদ্বেগের কারণ। এই হাইপার-ক্যাপিটালিজম হলো এমন এক ব্যবস্থা যেখানে সমাজের অতিধনী ব্যক্তিরা অবাধে সম্পদ তৈরি করতে পারে এবং রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রায় থাকে না বললেই চলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের নীতিগুলো কোনো নির্দিষ্ট জাতির মঙ্গলের জন্য প্রণীত হয়নি, বরং তা ১ শতাংশ ধনী মানুষের সুবিধা নিশ্চিত করতে তৈরি করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, অভিবাসন নীতি কঠোর করার মাধ্যমে তিনি সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ভীত করে তুলেছেন এবং তাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করেছেন।
এই ধরনের পদক্ষেপগুলো মূলত সমাজের ধনী শ্রেণির বিরুদ্ধে জনগণের অসন্তোষকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার কৌশল।
“টেকনো-অপটিমিস্ট” নামে পরিচিত একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর ধারণা ট্রাম্পের এই হাইপার-ক্যাপিটালিজমকে সমর্থন করে। তারা বিশ্বাস করে, প্রযুক্তির মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব এবং সীমাহীন মুনাফাই হলো উন্নতির একমাত্র পথ।
এই দর্শন অনুযায়ী, সমাজের অগ্রগতি লাভের জন্য প্রযুক্তি ও বাজারের ওপর পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া উচিত।
তবে, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিকে অনেকে জাতীয়তাবাদী প্রবণতা হিসেবে দেখলেও, এর আসল উদ্দেশ্য ভিন্ন। শুল্ক আরোপের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন দেশকে আলোচনার টেবিলে আনতে বাধ্য করেছেন।
যদিও তিনি কিছু শুল্ক স্থগিত করেছিলেন, তবে এর মূল লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ধনী ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করা, শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বামপন্থী দলগুলোর উচিত ট্রাম্পকে ফ্যাসিস্ট বলার পরিবর্তে, তার জনপ্রিয়তার কারণগুলো চিহ্নিত করা এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য বাস্তবসম্মত সমাধান তৈরি করা।
যেমন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। একইসঙ্গে, ধনী শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি উন্মোচন করে একটি শক্তিশালী বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ট্রাম্পের রাজনৈতিক কৌশল এবং অর্থনৈতিক নীতির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই হাইপার-ক্যাপিটালিস্ট দৃষ্টিভঙ্গি গণতন্ত্র এবং সাধারণ মানুষের অধিকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা