মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতির কড়া রূপায়ণের কারণে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে ট্রাম্প প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপের ফলে কিছু ক্ষেত্রে ভুল করে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাগুলো মার্কিন বিচার ব্যবস্থায় প্রক্রিয়াগত ত্রুটি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে, বিরল কিছু ক্ষেত্রে ১৮০০ সালের ‘এলিয়েন এনিমি অ্যাক্ট’ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা বিতর্কের জন্ম দেয় এবং ফেডারেল আদালতের সঙ্গে প্রশাসনের বিরোধ তৈরি করে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রশাসন বেশ কিছু ভুল করেছে, যার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, সালভাদরের এক নাগরিককে ভুল করে দেশে ফেরত পাঠানো। যদিও ওই ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রে থাকার আইনি অধিকার ছিল। জানা গেছে, ওই ব্যক্তির মামলা শুক্রবার ফেডারেল আদালতে শুনানির কথা ছিল।
অভিযোগ উঠেছে, অভিবাসন কর্তৃপক্ষ দ্রুততার সঙ্গে অভিবাসীদের বিতাড়িত করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা বিতাড়িত করার আগে প্রত্যেক অভিবাসীর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য যাচাই করে, বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে এমএস-১৩ বা ‘ট্রেন দে আরুয়া’র মতো গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
তবে, বিতাড়িত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকের সঙ্গেই গ্যাংয়ের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি। এমনকি, বিতাড়িত হওয়া কয়েকজনকে পরে যুক্তরাষ্ট্রেই ফেরত পাঠাতে হয়েছে, কারণ সালভাদরের কারাগারে তাদের গ্রহণ করতে রাজি হয়নি কর্তৃপক্ষ।
আদালতে বিতর্কের সময়, অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, তারা ভেনেজুয়েলার অপরাধী সংগঠন ‘ট্রেন দে আরুয়া’র সদস্যদের চিহ্নিত করার জন্য বিস্তারিত তদন্ত করেছেন। তিনি দাবি করেন, প্রত্যেক ব্যক্তির বিষয়ে গ্যাং কার্যকলাপ সম্পর্কে অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা তথ্য যাচাই করেছেন। যদিও, অনেক ক্ষেত্রে বিতাড়িত হওয়া ব্যক্তিদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্যের অভাব ছিল বলেও তিনি স্বীকার করেন।
মার্কিন প্রশাসনের এই পদক্ষেপ আবারও আলোচনায় আসে, যখন তারা স্বীকার করে যে, মেরিল্যান্ডে বসবাসকারী সালভাদরের নাগরিক কিলমার আর্মেন্ডো অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে ভুল করে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। যদিও তার যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি ছিল। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারোলিন লেভিট এই ঘটনাকে ‘ভুলবশত’ হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।
আরেকটি ঘটনায়, টেক্সাসের একটি আদালত রায় দিয়েছে যে, কর্তৃপক্ষের একজন ব্যক্তিকে আটক করাও ছিল বেআইনি। ওই ব্যক্তিকেও বিতাড়িত করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল।
এই ঘটনাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থার জটিলতা তুলে ধরে। এই ধরনের মামলাগুলো বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে এবং অভিবাসীদের বিভিন্ন ধরনের আইনি অধিকার রয়েছে। তাছাড়া, অভিবাসী এবং ফেডারেল সরকারের জন্য প্রক্রিয়াটি বেশ কঠিন।
মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিতাড়ন ফ্লাইটগুলো নিয়ে একটি শুনানিতে বিচারক প্রশ্ন তোলেন, সরকার আইনজীবীরা তাকে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন কিনা এবং প্রশাসনের অন্য কেউ এর সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা। বিচারক দ্রুততার সঙ্গে সালভাদরের কারাগারে বন্দীদের পাঠানোর বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং উল্লেখ করেন, এতে এমন ব্যক্তিদের পাঠানোর ঝুঁকি ছিল, যাদের আসলে বিতাড়িত করার কথা ছিল না।
আর্টিক্যালটিতে আরও জানা যায়, অভিবাসন আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, অনেক ভেনেজুয়েলীয়কে গ্যাং সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যদিও তাদের অনেকের সঙ্গেই গ্যাংয়ের কোনো সম্পর্ক ছিল না। এমনকি, বিতাড়িত হওয়ার আগে তাদের অভিবাসন সংক্রান্ত মামলা চলছিল।
ইমিগ্রান্ট ডিফেন্ডার্স ল’ সেন্টারের প্রেসিডেন্ট লিন্ডসে টোকজোওলোও জানান, তার মক্কেল, একজন ভেনেজুয়েলার আশ্রয়প্রার্থীকে তার অভিবাসন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন সূত্রে জানা যায়, একজন ভেনেজুয়েলার মহিলাকে টেক্সাস থেকে সালভাদরে পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু সেখানকার কারাগার কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রহণ করতে রাজি না হওয়ায় তাকে আবার যুক্তরাষ্ট্রেই ফেরত পাঠানো হয়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন