মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন বিষয়ক একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে। এর মধ্যে একটি হলো, ভুল করে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো এক ব্যক্তিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল এবং দক্ষিণ সুদানের নাগরিকদের ভিসা স্থগিত করার মতো পদক্ষেপগুলোও বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
মেরিল্যান্ডের বাসিন্দা কিলমার আর্মান্দো অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে এল সালভাদরের একটি উচ্চ-নিরাপত্তা কারাগারে ভুল করে পাঠিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, সোমবার রাতের মধ্যে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনতে হবে।
বিচারক পাওলা জাইনিস এই বিষয়টিকে ‘আইন বহির্ভূত’ এবং ‘মারাত্মক ভুল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং অ্যাব্রেগোকে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ বহাল রেখেছেন।
যদিও, দেশটির বিচার বিভাগ এই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেছে।
আদালতের নথি অনুযায়ী, অ্যাব্রেগো এক দশকেরও বেশি সময় আগে এল সালভাদরের গ্যাং-এর সহিংসতা থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসেছিলেন।
তাকে গ্রেপ্তারের সময় তার ৫ বছর বয়সী সন্তান গাড়িতেই ছিল। প্রথমে সরকার অ্যাব্রেগোর বিরুদ্ধে এমএস-১৩ গ্যাং-এর সদস্য হওয়ার অভিযোগ এনেছিল, তবে তার সঙ্গে গ্যাংয়ের যুক্ত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আব্রেরোর এই ঘটনাটি অভিবাসন সংক্রান্ত জটিলতার একটি উদাহরণ মাত্র। ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন সংখ্যা কমানো এবং অভিবাসীদের বিতাড়িত করার নীতি গ্রহণ করেছে, যেখানে বৈধ এবং অবৈধ উভয় পথে আসা অভিবাসীদের বিতাড়িত করা হচ্ছে।
যদিও, এল সালভাদরে ভুল করে বিতাড়নের বিষয়টি ট্রাম্প প্রশাসন প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে।
এই বিতর্কের মধ্যেই, দেশটির শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছ থেকে দ্রুত ঘটনার কারণ জানতে চাইছে।
অন্যদিকে, তুরস্কের পিএইচডি শিক্ষার্থী রুমিয়া ওজতুর্কের বিতাড়ন প্রক্রিয়া নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বোস্টনের একটি ফেডারেল আদালত রুমিয়ার মামলাটি ভার্মন্টে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে।
রুমিয়াকে তার আইনজীবীর থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা স্থগিত করার সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে। এমতাবস্থায়, যারা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে যেতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা বাড়ছে।
শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে, আমেরিকান কাউন্সিল অন এডুকেশন, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছে।
এরই মধ্যে, ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস অ্যামহার্স্টের অন্তত পাঁচজন শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া, ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অস্টিন এবং সিনসিনাটিরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী বা সদ্য স্নাতক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তাদের বর্তমান ও প্রাক্তন পাঁচ শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়াও, দক্ষিণ সুদানের নাগরিকদের ভিসা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। এর ফলে, যারা যুক্তরাষ্ট্রে আসতে চাইছেন, তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন