ট্রাম্প: অভিবাসীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশা!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিবাসীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি জানতে চান, যারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন, তাদের কি যথাযথ বিচার পাওয়ার অধিকার আছে?

ট্রাম্পের এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে, কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে এই বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন নিচে দেওয়া হলো।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, সে দেশের নাগরিক হোক বা না হোক, যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে থাকা সকল মানুষেরই ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এই অধিকারকে ‘due process’ বা ‘যথাযথ বিচার প্রক্রিয়া’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

এই প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো, সরকার যেন কোনো ব্যক্তিকে তার জীবন, স্বাধীনতা অথবা সম্পত্তি থেকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করতে না পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের পঞ্চম ও চতুর্দশ সংশোধনীতে এই অধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

কিন্তু ট্রাম্পের প্রশ্ন ছিল, অবৈধভাবে আসা অভিবাসীদের ক্ষেত্রেও কি এই একই বিচার প্রক্রিয়া প্রযোজ্য হবে? এই বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি সরাসরি কোনো উত্তর দেননি।

এমনকি, তিনি এও বলেছেন যে, তিনি আইনজীবী নন এবং সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত নন। তবে, তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, অবৈধ অভিবাসীদের জন্য হয়তো এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই ধারণা সঠিক নয়। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে ‘যথাযথ বিচার প্রক্রিয়া’র ধারণাটি সকলের জন্য প্রযোজ্য।

অভিবাসীরা কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন, তা বিবেচ্য বিষয় নয়, বরং তারা এখানে থাকলে তাদেরও এই অধিকার দেওয়া হয়। এই অধিকারের মধ্যে রয়েছে, সরকারের কোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে শুনানির সুযোগ পাওয়া, এবং কোনো অভিযোগের ক্ষেত্রে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ লাভ করা।

তবে, এই বিচার প্রক্রিয়ার কিছু ভিন্নতা রয়েছে। যেমন, কোনো অভিবাসী কতদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তার ওপর নির্ভর করে তার অধিকারের পরিধি ভিন্ন হতে পারে।

এছাড়াও, কোনো কোনো ক্ষেত্রে, যেমন দ্রুত বিতাড়ন প্রক্রিয়ার (expedited removal process) অধীনে, কিছু অভিবাসীকে সরাসরি বিচারকের সামনে হাজির হওয়ার সুযোগ নাও দেওয়া হতে পারে।

আরেকটি বিষয় হলো ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’ (Alien Enemies Act)। এই আইনের অধীনে, সরকার যুদ্ধকালীন সময়ে বিদেশি শত্রুদের বিতাড়িত করতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসন এই আইন ব্যবহার করে কিছু মানুষকে বিতাড়িত করেছে, যাদের তারা ভেনেজুয়েলার একটি গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যদিও সুপ্রিম কোর্ট এই বিতাড়ন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে এবং অভিবাসীদের তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জবাব দেওয়ার সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছে।

বিভিন্ন সময়ে ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং তাদের অধিকার খর্ব করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘যথাযথ বিচার প্রক্রিয়া’ একটি গণতান্ত্রিক সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এটি শুধু অভিবাসীদের অধিকার রক্ষা করে না, বরং সকল নাগরিকের অধিকারকেও সুনিশ্চিত করে। যদি এই প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে যায়, তাহলে যে কেউ সরকারের ইচ্ছামতো শাস্তির শিকার হতে পারে।

বস্তুত, ট্রাম্পের এই বক্তব্য সঠিক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান, আইনজ্ঞ এবং আদালতের বহু রায় অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী সকল মানুষেরই ‘যথাযথ বিচার প্রক্রিয়া’ পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *