আতঙ্ক! মুখোশ পরা ফেডারেল এজেন্টদের হাতে অভিবাসী শিক্ষার্থীদের আটকের কারণ?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতির কড়াকড়ি বাড়ার সাথে সাথে মুখ ঢাকা ফেডারেল এজেন্টদের ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, সাদা পোশাকে থাকা ফেডারেল এজেন্টদের মুখ ঢেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আটকের ঘটনা দেখা যাচ্ছে।

এই ধরনের পদক্ষেপের বৈধতা এবং তাদের পরিচয় গোপন রাখার অধিকার নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত কোনো তদন্তের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য আন্ডার কভারে কাজ করার সময় এজেন্টরা মুখ ঢেকে থাকেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে, যেখানে প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই একজন এজেন্টের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব, সেখানে এজেন্টদের নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রাক্তন ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কর্মকর্তা জেরি রবিনette-এর মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে এজেন্টদের উপর হামলার আশঙ্কা বেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির কট্টর সমালোচকরা মনে করেন, সরকার এক ধরনের “ডাবল স্ট্যান্ডার্ড” নীতি গ্রহণ করেছে। একদিকে তারা কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে মুখোশ পরার উপর নিষেধাজ্ঞা চাইছে, অন্যদিকে তাদের এজেন্টদের মুখ ঢেকে কাজ করার অনুমতি দিচ্ছে।

আইনজীবীরা সতর্ক করে বলছেন, ফেডারেল এজেন্টদের মুখ ঢেকে শিক্ষার্থীদের আটকের এই প্রবণতা স্বাভাবিকীকরণ করা হচ্ছে, যা উদ্বেগের বিষয়।

বিভিন্ন ঘটনায় দেখা গেছে, গ্রেফতারের সময় এজেন্টরা তাদের পরিচয় গোপন রাখতে মুখোশ ব্যবহার করছেন। যেমন, তুরস্কের নাগরিক রুমেয়সা ওজতুর্ককে ম্যাসাচুসেটসের টাফটস ইউনিভার্সিটির কাছে আটক করা হয়।

আটককৃতদের মধ্যে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলও রয়েছেন। তার আইনজীবী বলছেন, মাহমুদকে “অন্যায়ভাবে” আটক করা হয়েছে, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার শামিল।

তবে, কর্তৃপক্ষের দাবি, এজেন্টরা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সহানুভূতিশীলদের থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য মুখোশ ব্যবহার করে। এই বিষয়ে জন মিলার, যিনি সিএনএন-এর প্রধান আইন ও গোয়েন্দা বিশ্লেষক, বলেছেন, “যদি তারা বৈধভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য হন এবং আইন মেনেই গ্রেফতার করেন, তবে কেন তারা তাদের পরিচয় গোপন করছেন?”

অন্যদিকে, এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে প্রকাশ হয়ে যাওয়া এবং তাদের হয়রানির শিকার হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিকে যেমন এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি, তেমনি মুখোশের ব্যবহার নিয়ে একটি সুস্পষ্ট নীতি থাকা দরকার।

সাবেক আইসিই পরিচালক জন স্যান্ডওয়েগ বলছেন, এই ধরনের পরিস্থিতি ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির ফল। তিনি আরও যোগ করেন, এই ধরনের ছবিগুলো “আদর্শ নয়।” তবে, এজেন্টদের নিরাপত্তা সব সময় অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।

আইনজীবীরা মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তারা বলছেন, যারা ভিসাধারী ব্যক্তিদের “নিখোঁজ” করার সঙ্গে জড়িত, তাদের অবশ্যই শনাক্ত করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, মুখোশ পরিহিত ফেডারেল এজেন্টদের এই কার্যক্রম একটি নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে। তারা আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে এটি আরও বাড়তে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *