ট্রাম্পের বিতর্কিত অভিবাসন নীতির আসল কারণ ফাঁস!

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে অভিবাসন নীতি প্রণয়নে মিথ্যা তথ্যের আশ্রয় নেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কিভাবে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করেছেন।

আল জাজিরার একটি প্রতিবেদনে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ট্রাম্প তার মেয়াদে অভিবাসনকে একটি ‘আক্রমণ’ হিসেবে চিত্রিত করতে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের আশ্রয় নিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি পুরনো কিছু আইনকে কাজে লাগিয়ে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছেন।

এর মূল কারণ ছিল, তিনি তার সমর্থকদের মধ্যে ভীতি তৈরি করতে চেয়েছিলেন যে, অভিবাসীরা দেশের নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক জীবনে হুমকি সৃষ্টি করছে।

ট্রাম্প প্রায়ই অভিযোগ করেছেন যে, বিভিন্ন দেশ থেকে অপরাধী এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হচ্ছে। এমনকি তিনি এমনও দাবি করেছেন যে, অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত দিয়ে ‘অনুপ্রবেশ’ করছে।

এইসব অভিযোগের সমর্থনে তিনি কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। এমনকি অনেক সময় তিনি আদালতের রায়কেও অগ্রাহ্য করেছেন।

উদাহরণস্বরূপ, ট্রাম্প ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’ নামক একটি পুরনো আইন ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলার কিছু নাগরিককে বিতাড়িত করার চেষ্টা করেন। এই আইনের অধীনে, কোনো দেশের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হলে, সেই দেশের নাগরিকদের আটক বা ফেরত পাঠানো যায়।

তবে, এই আইনের প্রয়োগ সাধারণত যুদ্ধকালীন সময়ে সীমাবদ্ধ থাকে। ট্রাম্প এই আইনকে ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলেন, যাদের তিনি অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই ধরনের বক্তব্য এবং পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য ছিল, অভিবাসনকে কেন্দ্র করে একটি ভীতি তৈরি করা। এর মাধ্যমে তিনি তার রাজনৈতিক ভিত্তি আরও মজবুত করতে চেয়েছিলেন।

তবে, বিভিন্ন গবেষণা ও পরিসংখ্যান বলছে, অভিবাসীদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের হার স্থানীয় নাগরিকদের তুলনায় অনেক কম। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে, অভিবাসীরা সমাজের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের ক্ষমতাকে খাটো করে দেখিয়েছে। তারা প্রায়ই অভিযোগ করেছে যে, আদালত এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না, কারণ এটি জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র নীতির সঙ্গে জড়িত।

তবে, আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালতের এই বিষয়ে রায় দেওয়ার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও আইনজীবীরা ট্রাম্পের এই নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, এর ফলে অভিবাসীদের মৌলিক অধিকারগুলো লঙ্ঘিত হয়েছে এবং তাদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ বেড়েছে।

এমনকি, এর কারণে সংখ্যালঘুদের মধ্যেও ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে, ট্রাম্পের আমলে মিথ্যা তথ্যের ব্যবহার এবং আইনি প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই বিষয়গুলো গণতন্ত্রের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *