ট্রাম্পের অভিবাসন: পুরনো নীতি ফিরিয়ে বিতর্কের ঝড়!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির উত্থান-পতন: ইতিহাসের পাতা থেকে বর্তমানের বিতর্ক।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি একটি জটিল বিষয়, যা সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তিত হয়েছে। দেশটির ইতিহাসের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত, অভিবাসন আইনগুলি বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, যা অভিবাসীদের আগমনকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং বিভিন্ন সময়ে জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগও সৃষ্টি করেছে।

সম্প্রতি, পুরনো কিছু অভিবাসন নীতিকে পুনরায় আলোচনায় আনা হয়েছে, যা এই নীতির বিবর্তনকে আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে।

১৭৯০ সালে, প্রথম কংগ্রেস একটি প্রাকৃতিকীকরণ আইন পাস করে। এই আইনের মাধ্যমে, “মুক্ত শ্বেতাঙ্গ” ব্যক্তি, যারা অন্তত দুই বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তাদের নাগরিকত্বের সুযোগ দেওয়া হয়।

এর কয়েক বছর পর, ১৭৯৮ সালের “এলিয়েন শত্রু আইন” সরকারের হাতে এমন ক্ষমতা দেয় যে তারা যুদ্ধকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি স্বরূপ বিবেচিত বিদেশি নাগরিকদের আটক ও তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করতে পারবে।

এরপর, উনিশ শতকে চীনের অভিবাসীরা ক্যালিফোর্নিয়ায় সোনা খোঁজার জন্য আসতে শুরু করে। ১৮৪০ থেকে ১৮৭০ এর দশকে, এই অভিবাসন ব্যাপক রূপ নেয়।

এর ফলস্বরূপ, শ্বেতাঙ্গ শ্রমিকরা তাদের চাকরি হারানোর ভয়ে চীনা অভিবাসীদের প্রতি বিদ্বেষী হয়ে ওঠে। ১৮৮২ সালে, “চাইনিজ exclusion act” নামে একটি আইন পাস হয়, যা কোনো নির্দিষ্ট জাতির লোকজনকে যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব লাভের পথ থেকে বিরত রাখার প্রথম ফেডারেল আইন ছিল।

১৯ শতকের শেষের দিকে, অভিবাসন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ১৮৯১ সালের অভিবাসন আইন তৈরি করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে, রাজ্যগুলির পরিবর্তে ফেডারেল সরকার অভিবাসন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা লাভ করে।

এর ফলস্বরূপ, ১৮৯২ সালে এলিস আইল্যান্ড খোলা হয়, যা অভিবাসীদের জন্য একটি প্রধান প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে, ১৯১৭ সালের অভিবাসন আইন জারি করা হয়। এই আইনে মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়া থেকে আসা অনেক মানুষের অভিবাসন সীমিত করা হয়।

একই সময়ে, অভিবাসীদের মধ্যে সাক্ষরতার একটি পরীক্ষা নেওয়া হতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জাতীয় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এই আইন তৈরি করা হয়েছিল।

যদিও প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এই আইনের বিরোধিতা করেছিলেন, তবে কংগ্রেস তার ভেটো বাতিল করে দেয়।

১৯২০ এর দশকে, অভিবাসন ভীতি এবং বিশ্বজুড়ে অস্থিরতার কারণে ১৯২১ সালের “ইমার্জেন্সি কোটা অ্যাক্ট” তৈরি করা হয়। এই আইনে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের সংখ্যা সীমিত করা হয়।

একই সময়ে, ১৯২৪ সালের অভিবাসন আইন তৈরি করা হয়, যা অভিবাসন কমানোর পাশাপাশি পশ্চিমা ও উত্তরা ইউরোপ থেকে আসা অভিবাসীদের সুযোগ বাড়িয়ে দেয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, জাপানি-আমেরিকানদের “রি-লোকেশন সেন্টার” বা “ইন্টার্নমেন্ট ক্যাম্পে” বন্দী করা হয়। ১৯৪৩ সালে, “চাইনিজ exclusion act” বাতিল করা হয়, এবং চীন থেকে আসা অভিবাসীদের জন্য কোটা নির্ধারণ করা হয়।

বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, ১৯৫২ সালের “ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট” তৈরি করা হয়, যা আধুনিক অভিবাসন আইনের ভিত্তি স্থাপন করে।

এই আইনে এশিয়া থেকে আসা অভিবাসীদের উপর থেকে নাগরিকত্বের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়। তবে, এই আইনেও কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, যেমন কোটা পদ্ধতিতে জাতিগত বিভাজন বিদ্যমান ছিল।

১৯৬৫ সালের “ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট”-এর মাধ্যমে কোটা প্রথা বাতিল করা হয় এবং পরিবার পুনর্মিলন ও দক্ষতার ভিত্তিতে অভিবাসনের সুযোগ তৈরি হয়।

তবে, এই আইনেও কিছু দুর্বলতা ছিল, যার ফলস্বরূপ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের মধ্যে বৈষম্য দেখা যায়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, অভিবাসন নীতি নিয়ে বিতর্ক আরও বেড়েছে। সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা এবং অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এমনকি, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মেয়াদে অতীতের কিছু বিতর্কিত নীতি পুনরায় চালুর চেষ্টা করেছিলেন।

বর্তমানে, অভিবাসন একটি জটিল এবং সংবেদনশীল বিষয়, যা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্কের জন্ম দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এর পরিবর্তন অব্যাহত থাকবে, যা দেশটির ইতিহাস, অর্থনীতি এবং সমাজের উপর গভীর প্রভাব ফেলবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *