ট্রাম্পের নতুন ঘোষণা: আয়কর বাতিলের প্রতিশ্রুতি, কিন্তু…

ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি একসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সম্প্রতি আবারও একটি চাঞ্চল্যকর প্রস্তাবের কথা বলেছেন।

তিনি নাকি একদিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের আয়কর দেওয়া থেকে মুক্তি দিতে চান, এবং এর জন্য তিনি আমদানি শুল্কের উপর নির্ভর করতে চান।

সহজ কথায়, ট্রাম্পের পরিকল্পনা হলো, বাইরে থেকে আসা পণ্যের উপর শুল্ক বসিয়ে সেই রাজস্ব দিয়ে দেশের মানুষের আয়কর মওকুফ করা।

কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা বেশ কঠিন।

কারণ, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সরকার আয়কর থেকে বছরে প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হারে প্রায় ৩২৭ লক্ষ কোটি টাকার বেশি) সংগ্রহ করে।

এই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব অন্য কোনো উৎস থেকে পেতে হলে, আমদানি শুল্কের পরিমাণ অনেক বাড়াতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ, অ্যাপোলো গ্লোবাল ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ টরস্টেন স্লোক বলেছেন, যদি আয়করের সমান রাজস্ব পেতে হয়, তাহলে আমদানি করা সব পণ্যের উপর শুল্ক অন্তত ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে হবে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্কের হার প্রায় ২২.৮ শতাংশ।

তার মানে, আয়করের বিকল্প হিসেবে শুল্কের হার এখনকার চেয়ে চার গুণেরও বেশি বাড়াতে হবে।

কিন্তু উচ্চ হারে শুল্ক বসানো হলে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যখন কোনো পণ্যের দাম বাড়ে, তখন স্বাভাবিকভাবেই মানুষ সেই পণ্য কম কেনে।

ফলে সরকারের রাজস্ব আদায় কমে যেতে পারে।

স্লোকের মতে, আয়করের সমান রাজস্ব পেতে হলে কিছু পণ্যের উপর ২০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসাতে হতে পারে, যার ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম আরো অনেক বেড়ে যাবে।

আরেকটি সমস্যা হলো, ট্রাম্প প্রায়ই বলেন, তিনি চান যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো যেন তাদের পণ্য দেশেই তৈরি করে।

যদি এমনটা হয়, তাহলে বাইরে থেকে পণ্য আমদানি কমে যাবে।

ফলস্বরূপ, সরকারের শুল্ক বাবদ আয়ও কমে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিকও অতীতে এই ধারণা সমর্থন করেছেন।

তিনি বলেছিলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য হলো, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবা (Internal Revenue Service) বাতিল করা এবং বাইরের দেশ থেকে আসা পণ্যের উপর শুল্ক বসিয়ে রাজস্ব সংগ্রহ করা।

তবে, ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, এই পরিকল্পনা রাতারাতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেছেন, প্রথমে তিনি বছরে ২ লক্ষ ডলারের কম আয় করা মানুষের জন্য কর কমানোর চেষ্টা করবেন।

একইসঙ্গে, তিনি এটাও মনে করেন যে, শুল্ক থেকে পাওয়া রাজস্ব শুধু আয়কর কমানোর জন্য নয়, বরং দেশের ঋণ পরিশোধের কাজেও ব্যবহার করা উচিত।

মোটকথা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী।

এর সফলতার জন্য বিপুল পরিমাণ শুল্ক আরোপ করতে হবে, যা অর্থনীতির উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *