আয়কর বাতিলের ঘোষণা ট্রাম্পের, আছে কি কোনো ফাঁদ?

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি একটি চাঞ্চল্যকর প্রস্তাব পেশ করেছেন: তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য আয়কর সম্পূর্ণভাবে তুলে দিতে চান। আর এই আয়কর বাবদ সরকারের যে রাজস্ব ক্ষতি হবে, তা পূরণ করার জন্য আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক (ট্যারিফ) বসানোর পরিকল্পনা করেছেন তিনি।

তবে, অর্থনীতিবিদরা এই পরিকল্পনার কার্যকারিতা এবং সম্ভাব্য ফল নিয়ে গভীর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এমন পদক্ষেপের ফলে ভোক্তাদের জন্য জিনিসপত্রের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যেতে পারে।

ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের মূল ধারণা হলো, বর্তমানে মার্কিন সরকার নাগরিকদের কাছ থেকে যে পরিমাণ অর্থ আয়কর হিসেবে সংগ্রহ করে, সেই একই পরিমাণ অর্থ আমদানি শুল্কের মাধ্যমে আদায় করা হবে। সাধারণত, কোনো দেশ যখন অন্য দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, তখন সেই পণ্যের ওপর শুল্ক ধার্য করা হয়।

ট্রাম্প মনে করেন, এই শুল্কের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয় বজায় রাখা সম্ভব হবে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন। কারণ, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে, তার থেকে অনেক বেশি হারে শুল্ক বসাতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক আয়কর সংগ্রহের পরিমাণ ৩ ট্রিলিয়ন ডলার হয়, এবং দেশটি ৩ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করে, তাহলে এই আয়কর পূরণ করতে হলে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর অন্তত ১০০ শতাংশ শুল্ক বসাতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমানে কার্যকর শুল্কের হার প্রায় ২২.৮ শতাংশ। অর্থাৎ, আয়করের সমান রাজস্ব পেতে হলে, এই হারকে বর্তমানের চেয়ে চার গুণেরও বেশি বাড়াতে হবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এত বেশি হারে শুল্ক বসালে তা আমেরিকার অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

কারণ, শুল্ক বাড়লে পণ্যের দাম বাড়বে, ফলে মানুষ কম জিনিস কিনবে। এর ফলস্বরূপ, অনেক ব্যবসার বিক্রি কমে যাবে, এবং অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবে।

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, শুধু দাম বাড়ানোই যথেষ্ট নয়। অনেক ক্ষেত্রে, দাম বাড়ার কারণে চাহিদা কমে যায়। ফলে, সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণ নাও হতে পারে।

যদি আমদানিকৃত পণ্যের দাম দ্বিগুণ করা হয়, তাহলে বিক্রি কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে, আয়করের সমান রাজস্ব পেতে হলে পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসাতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাক্স ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এরিকা ইয়র্ক মনে করেন, “এই হিসাব মেলানো সম্ভব নয়। এটা সম্ভবত সাধারণ মানুষের জন্য ভালো কোনো পদক্ষেপ হবে না।

তিনি আরও যোগ করেন, “এই ধরনের নীতি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

কারণ, আয়কর একটি প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা, যেখানে বেশি আয় করা ব্যক্তি বেশি কর দেন। অন্যদিকে, শুল্ক একটি অপ্রগতিশীল কর ব্যবস্থা, যেখানে সবাই একই হারে কর দেয়, যা গরিব মানুষের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য মনে করেন, উচ্চ হারে শুল্ক বসানো হলে তা দেশের জন্য লাভজনক হবে। তিনি সম্প্রতি বলেছেন, শুল্কের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দেশের ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করা হবে।

তবে, ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে, আয়কর সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া।

এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নে আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, আয়কর বাতিল করতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, শুল্ক বাড়ানোর ফলে যদি কোম্পানিগুলো পণ্য উৎপাদন কমালে, তাহলে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যেতে পারে।

এছাড়াও, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই ধরনের নীতি বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ সৃষ্টি করতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *