শেয়ার বাজারে বড় ‘ধাক্কা’! ট্রাম্পের ঘোষণার পরই ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের অভিযোগ!

ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের কয়েক ঘণ্টা পরেই শুল্ক নীতিতে আকস্মিক পরিবর্তনের জেরে বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারে বড় ধরনের উত্থান দেখা দিয়েছে। এর পরই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ইনসাইডার ট্রেডিং বা অভ্যন্তরীণ তথ্য ব্যবহার করে বাজারকে প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার সকালে, মার্কিন বাজার খোলার কিছুক্ষণ আগে, ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লেখেন, “এই মুহূর্তে বিনিয়োগের দারুণ সুযোগ!!! ডিজেটি।” এর কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি ঘোষণা করেন, চীন বাদে অন্য দেশগুলোর উপর অতিরিক্ত বাণিজ্য শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হচ্ছে। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই শেয়ার সূচকগুলো ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্রে এস&পি ৫০০ সূচক ৯ শতাংশের বেশি এবং প্রযুক্তি-নির্ভর নাসডাক সূচক ১২ শতাংশের বেশি বেড়েছে। বৃহস্পতিবার এশিয়া ও ইউরোপেও শেয়ারের দাম বাড়ে। জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ৯ শতাংশ এবং লন্ডনের এফটিএসই১০০ সূচক শুরুতে ৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

এখানেই বিতর্কের সূত্রপাত। ট্রাম্প সাধারণত তাঁর পোস্টের শেষে নিজের নামের আদ্যক্ষর ব্যবহার করেন না। তবে এই ‘ডিজেটি’ অক্ষরগুলো আসলে ‘ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ’-এর শেয়ারের সংকেত, যারা ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ নিয়ন্ত্রণ করে। বুধবার এই কোম্পানির শেয়ারের দাম ২২ শতাংশ বেড়ে যায়।

ট্রাম্পের পোস্টের সময় এবং এর পরপরই শেয়ারের দামে উল্লম্ফন নিয়ে বাজার কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। ডেমোক্রেটিক সিনেটর অ্যাডাম শিফ এক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “নীতির এই অস্থির পরিবর্তনগুলো ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের জন্য বিপজ্জনক সুযোগ তৈরি করে।”

তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “ট্রাম্পের সর্বশেষ শুল্ক পরিবর্তনের বিষয়ে প্রশাসনের কারা আগে থেকে জানতেন? কেউ কি শেয়ার কিনেছেন বা বিক্রি করেছেন, যা জনসাধারণের অর্থে লাভ এনে দিয়েছে? জনস্বার্থ রক্ষার জন্য এই বিষয়ে বিস্তারিত জানা জরুরি।”

ডেমোক্রেটিক সিনেটর ক্রিস মার্ফিও এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, “একটি ইনসাইডার ট্রেডিং কেলেঙ্কারি আসন্ন… ট্রাম্পের সকাল ৯:৩০-এর টুইট থেকে স্পষ্ট যে, তিনি চেয়েছিলেন তাঁর লোকজন গোপন তথ্য ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করুক। তাহলে, কারা আগে থেকে জানতেন এবং তাঁরা কত টাকা আয় করেছেন?”

নিউইয়র্কের ডেমোক্রেটিক প্রতিনিধি আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ কংগ্রেসের সকল সদস্যকে গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেনা শেয়ারের হিসাব প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প জানান, তিনি গত কয়েক দিন ধরেই শুল্ক স্থগিতের বিষয়ে ভাবছিলেন। তবে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি ছিল তাদের পূর্বপরিকল্পনার অংশ। শুল্ক নীতি পরিবর্তনের ফলে বাজারে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, কয়েকজন বিনিয়োগকারী সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন।

রিপাবলিকান ও ট্রাম্পের মিত্র জর্জিয়ার প্রতিনিধি মার্জোরি টেলর গ্রিন ২ ও ৩ এপ্রিল বেশ কিছু শেয়ার কিনেছেন।

যদিও ট্রাম্প অধিকাংশ দেশের উপর নতুন শুল্ক স্থগিত করেছেন, তবে তিনি চীনের উপর চাপ বজায় রেখেছেন। তিনি চীনের আমদানি শুল্ক ১০৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছেন। বেইজিংও এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর নতুন শুল্ক আরোপ করতে পারে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *