ডোনাল্ড ট্রাম্প, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, আটলান্টিক ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজি হয়েছেন। সম্প্রতি একটি ঘটনার সূত্র ধরে এই সাক্ষাৎকারটি হতে যাচ্ছে, যেখানে গোল্ডবার্গ অনিচ্ছাকৃতভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি গোপন মেসেজিং গ্রুপে যুক্ত হয়েছিলেন।
সেই গ্রুপে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আদান-প্রদান হয়েছিল, যা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করে। ঘটনাটি ‘সিগনালগেট’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
ট্রাম্পের এই সাক্ষাৎকারে রাজি হওয়ার কারণ হিসেবে কৌতূহল এবং নিজেকে যাচাই করার ইচ্ছের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আটলান্টিক ম্যাগাজিন তার সম্পর্কে কতটা নিরপেক্ষভাবে লিখতে পারে, তা তিনি পরখ করতে চান।
ট্রাম্পের মতে, পত্রিকাটি প্রায়ই তার সম্পর্কে ভিত্তিহীন গল্প তৈরি করে। তিনি এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চান যে, আটলান্টিক তার সম্পর্কে একটি সঠিক প্রতিবেদন তৈরি করতে সক্ষম কিনা।
সাক্ষাৎকারে গোল্ডবার্গের সঙ্গে থাকবেন আটলান্টিকের লেখক মাইকেল শেরার এবং অ্যাশলে পার্কার। ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই সাক্ষাৎকারটি “শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রেসিডেন্ট” শীর্ষক একটি দীর্ঘ প্রতিবেদনের অংশ হতে পারে।
“সিগনালগেট” বিতর্কের সূত্রপাত হয় যখন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ, ভুলবশত আটলান্টিকের প্রধান সম্পাদককে একটি সিগনাল চ্যাটে যুক্ত করেন। এই চ্যাটে শীর্ষ প্রতিরক্ষা উপদেষ্টারা ইয়েমেনে মার্কিন সামরিক অভিযান নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
এই ঘটনার জেরে মার্কিন কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। কারণ, এর মাধ্যমে নিরাপত্তা বিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
গোল্ডবার্গ যখন এই গোপন চ্যাটে যুক্ত হন, তখন তিনি বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। কারণ, কথোপকথনটি আসল কিনা, তা নিয়ে তার সন্দেহ ছিল।
এরপর প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ, সেই গ্রুপে ইয়েমেনে হাউছি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান সম্পর্কিত গোপন তথ্য শেয়ার করেন। পরে গোল্ডবার্গ, আলোচনার সত্যতা প্রমাণ করতে সেই চ্যাট থেকে কিছু স্ক্রিনশট প্রকাশ করেন।
এই ঘটনার পর ট্রাম্প প্রশাসন প্রথমে বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখার চেষ্টা করে। তারা জানায়, গোল্ডবার্গ যে টেক্সটগুলো দেখেছেন, তাতে কোনো গোপন তথ্য ছিল না।
তবে পরে সমালোচনার মুখে হেগসেথ জানান, সেখানে কোনো যুদ্ধ পরিকল্পনার কথা আলোচনা হয়নি।
ট্রাম্প অতীতেও গোল্ডবার্গের কাজের সমালোচনা করেছেন। ২০২০ সালে গোল্ডবার্গ একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ট্রাম্প যুদ্ধে নিহত মার্কিন সেনাদের “সাকার” এবং “লুজার” বলেছিলেন।
ট্রাম্প সেই প্রতিবেদনটিকে মিথ্যা ও বানোয়াট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থক মহলে, এই সাক্ষাৎকারের বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্প হয়তো গোল্ডবার্গের মাধ্যমে আটলান্টিকের নিরপেক্ষতা যাচাই করতে চাইছেন।
আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এর মাধ্যমে ট্রাম্প গণমাধ্যমের সঙ্গে তার সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চাইছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন