যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে, প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আকর্ষণের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে, এই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, হোয়াইট হাউসের নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী বিনিয়োগের পরিমাণ ট্রাম্পের দাবির তুলনায় অনেক কম।
হোয়াইট হাউস সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা এবং বিদেশি বিনিয়োগের সম্মিলিত পরিমাণ প্রায় ৫.১ ট্রিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে কর্পোরেট বিনিয়োগের পরিমাণ ২.১ ট্রিলিয়ন ডলার।
যদিও ট্রাম্পের দাবি করা বিনিয়োগের অঙ্ক এর দ্বিগুণেরও বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘোষিত বিনিয়োগের পুরোটা সত্যিই বাস্তবে রূপ নাও নিতে পারে।
ট্রাম্পের এই দাবির প্রেক্ষাপটে, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগের ঘোষণাগুলো পর্যালোচনা করা হয়েছে। ওপেনএআই, এনভিidia, অ্যাপল, আইবিএম এবং তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির মতো বড় বড় সংস্থাগুলোর বিনিয়োগ পরিকল্পনা এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
উদাহরণস্বরূপ, ওপেনএআই, ওরাকল এবং সফটব্যাংকের ‘স্টারগেট প্রজেক্ট’-এর অধীনে ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ঘোষণাগুলো অনেক সময় ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নির্দেশ করে, যা সব ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়িত নাও হতে পারে।
এনভিidia’র পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অবকাঠামো খাতে ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। যদিও বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই বিশাল অঙ্কটি কিছুটা অতিরঞ্জিত হতে পারে।
একইভাবে, অ্যাপল-এর পক্ষ থেকে আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগের ঘোষণার বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি মূলত তাদের বিদ্যমান কার্যক্রমেরই ধারাবাহিকতা।
অন্যদিকে, তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি) যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বিনিয়োগের অঙ্কটি ট্রাম্পের দেওয়া অন্যান্য হিসাবের তুলনায় বেশি নির্ভরযোগ্য। কারণ, এই বিনিয়োগের পেছনে রয়েছে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন পুনরায় দেশে ফিরিয়ে আনার একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, যা বাইডেন সরকারের ‘চিপস এন্ড সায়েন্স অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে আরও গতি পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প সম্ভবত অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ এবং সরবরাহ শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে কিছু কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন।
তবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান, সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বিনিয়োগ এবং ক্লাউড কম্পিউটিং অবকাঠামোর মতো বিষয়গুলো মূলত দীর্ঘমেয়াদী কাঠামোগত পরিবর্তনের ফল, যা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বিদেশি বিনিয়োগের গুরুত্ব অনেক। এর কারণ, এই বিনিয়োগ একদিকে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, তেমনি প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনেও সহায়তা করে।
তবে, বিনিয়োগের পরিমাণ এবং তার বাস্তবায়ন নিয়ে সঠিক তথ্য জানা অত্যন্ত জরুরি।
এই নিবন্ধটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে এবং এর উদ্দেশ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দাবিগুলোর একটি বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ সরবরাহ করা।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা