ইরান ইস্যুতে ট্রাম্পের ‘ধোঁয়াশা’, হতাশায় ইসরায়েল!

ইরানকে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দু-সপ্তাহের সময়ক্ষেপণ ইসরায়েলের জন্য এক গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে এই ঘটনায় দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ইসরায়েলি নীতিনির্ধারকেরা।

দীর্ঘদিন ধরে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাওয়া ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চেয়েছিল তেল আবিব।

ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা চেয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরিভাবে এই সংঘাতে যুক্ত হোক। তাঁদের মতে, এতে দ্রুত সংঘাতের সমাধান করা যাবে এবং ইরানকে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা সম্ভব হবে।

কিন্তু ট্রাম্পের এই সময়ক্ষেপণের সিদ্ধান্তে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে। এখন ইসরায়েলের নেতারা তাঁদের বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ সতর্ক থাকছেন।

তাঁরা চাইছেন না, এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে যা ট্রাম্পকে এই অঞ্চলে সামরিক হস্তক্ষেপের দিকে ঠেলে দেয়। কারণ, ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে এমন ধরনের সংঘাত এড়িয়ে চলতে চেয়েছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই দ্বিধা ইসরায়েলের সামরিক পরিকল্পনার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বাধা।

এই স্থাপনাটি ভূগর্ভে গভীর করে তৈরি করা হয়েছে। এখানে হামলা চালানোর জন্য অত্যাধুনিক বোমা প্রয়োজন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর কাছেই রয়েছে।

ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া ফোরদোতে সফল হামলা চালানো কঠিন হবে।

কারণ, এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইয়াকি দায়ান মনে করেন, ইসরায়েল সম্ভবত একাই ফোরদোতে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন না পাওয়া তাদের জন্য বেশ উদ্বেগের কারণ।

ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরুর পর এখন পর্যন্ত দেশটির নেতারা ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন।

কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ এই সংঘাতের গতিপথ সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও ভিন্নমত দেখা যাচ্ছে।

অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম্পের এই সময়ক্ষেপণ একটি কৌশল হতে পারে। এর মাধ্যমে তিনি তেহরানকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন, আবার অনেকে মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানের ওপর সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে।

ইসরায়েলের সাবেক কনসাল জেনারেল আলন পিঙ্কাস মনে করেন, ট্রাম্পের এই সময়সীমা নির্ধারণের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং ট্রাম্পের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ চলছে।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প সাধারণত তাঁর উপদেষ্টাদের একটি ছোট দলের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেন।

অন্যদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার সুইজারল্যান্ডে যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

এই বৈঠকের মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির একটি কূটনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা যাচাই করা হতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *