যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বিচার বিভাগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়া বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও প্রথম মেয়াদে ফেডারেলিস্ট সোসাইটির (Federalist Society) সঙ্গে তাঁর কিছু বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দিয়েছিল, তবে এবার তিনি মূলত রক্ষণশীল ধারার আইনজীবীদেরই বেছে নিচ্ছেন।
এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিচারপতি স্যামুয়েল আলিতো (Samuel Alito) এবং ক্লারেন্স থॉमাসের (Clarence Thomas) মতো প্রবীণ বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে।
কারণ, তাঁরা চাইবেন তাঁদের উত্তরসূরিও যেন তাঁদের মতোই রক্ষণশীল আদর্শের অনুসারী হন। উল্লেখ্য, ফেডারেলিস্ট সোসাইটি হলো রক্ষণশীল আইনজীবীদের একটি প্রভাবশালী সংগঠন, যা বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের বিচারক মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় হোয়াইট হাউসের অ্যাটর্নিরা বিশেষভাবে নজর রাখছেন। তাঁরা সম্ভবত এমন বিচারপতিদের বেছে নিতে চাইছেন, যাঁরা সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য।
সম্প্রতি, ট্রাম্পের মনোনীত কয়েকজন বিচারকের নাম আলোচনায় এসেছে, যাঁদের মধ্যে রেবেকা টাইবেলসন (Rebecca Taibleson) অন্যতম। তিনি পূর্বে বিচারপতি ব্রেট কাভানাফের (Brett Kavanaugh) এবং প্রয়াত বিচারপতি আন্তোনিন স্কালিয়ার (Antonin Scalia) জুনিয়র ক্লার্ক ছিলেন।
তবে, ট্রাম্পের বিচারক মনোনয়ন প্রক্রিয়া সব সময় মসৃণ ছিল না। প্রথম মেয়াদে এমিল বোভেকে (Emil Bove) একটি গুরুত্বপূর্ণ আপিল আদালতে নিয়োগ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর মতো প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমও তাঁর মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।
তবে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের মনোনয়নগুলি আগের তুলনায় অনেক বেশি ঐতিহ্যবাহী ধারার দিকে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে, ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের রাসেল হুইলারের (Russell Wheeler) একটি পর্যবেক্ষণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তিনি উল্লেখ করেছেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বিচারক অবসর গ্রহণের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। এর কারণ হতে পারে, রিপাবলিকান দল থেকে নিয়োগ পাওয়া বিচারপতিরাও হয়তো ট্রাম্পের সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের নিয়ে চিন্তিত।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে এই ধরনের নিয়োগের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। জেলা আদালত থেকে শুরু করে আপিল আদালত এবং সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত, বিচারকরা ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের বিভিন্ন নীতি এবং সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আসা মামলার রায় দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
একই সঙ্গে, গর্ভপাতের অধিকার, জাতিগত অধিকার এবং ধর্ম ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতেও তাঁদের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্পের মনোনীত অধিকাংশ বিচারকের ফেডারেলিস্ট সোসাইটির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে।
তাঁদের মধ্যে অনেকে রক্ষণশীল ধারার আইনজীবী এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ক্লার্ক হিসেবেও কাজ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে, বিচারপতি আলিতো এবং বিচারপতি থॉमাসের মতো প্রবীণ বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ক্লারেন্স থॉमাসের বয়স ৭৭ বছর, এবং বিচারপতি স্যামুয়েল আলিতোর বয়স ৭৫ বছর। তাঁদের উত্তরসূরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত তাঁদের অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, রক্ষণশীল আইনজীবীদের সংগঠন ফেডারেলিস্ট সোসাইটির প্রভাব আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তথ্য সূত্র: সিএনএন