ট্রাম্পের বিচারপতি: গর্ভপাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা!

যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের অধিকারের প্রশ্নে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিচারক নিয়োগ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ট্রাম্পের মনোনীত বেশ কয়েকজন বিচারক গর্ভপাতের বিরোধী এবং তারা এই সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের মতামতও জানিয়েছেন।

এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের গর্ভপাতের অধিকার আগামী কয়েক দশক ধরে দুর্বল হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই পদে থাকা ব্যক্তিরা আজীবন বহাল থাকেন। ফলে, ট্রাম্পের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো তাঁর ক্ষমতা ছাড়ার পরও দীর্ঘ সময় ধরে দেশটির আইন ও বিচার ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলবে।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ট্রাম্পের মনোনীত অনেক বিচারক অতীতে গর্ভপাতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কেউ গর্ভপাতকে ‘বর্বর প্রথা’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। এমনকি, একটি মামলার শুনানিতে তাঁরা গর্ভপাতের ওষুধ নিয়ে ভুল তথ্যও ছড়িয়েছেন।

যদিও ট্রাম্প নিজে বরাবরই গর্ভপাত নিয়ে একটি দ্বিমুখী অবস্থান বজায় রেখেছেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি গর্ভপাতের বিষয়ে রাজ্যের অধিকারের কথা বলেছেন, আবার কখনো ফেডারেল পর্যায়ে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছেন।

নির্বাচনের আগে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও, তাঁর নেওয়া বিচারক নিয়োগের সিদ্ধান্তগুলো কার্যত গর্ভপাত বিরোধী অবস্থানের দিকেই ইঙ্গিত করে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়া আদালতের ভেতরে গর্ভপাত বিরোধী একটি প্রভাবশালী অবস্থান তৈরি করবে। এর ফলে, ভবিষ্যতে গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে থাকা নারীদের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বার্নাডেট মেইলারের মতে, বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে কংগ্রেস বা সরাসরি কোনো ঘোষণা ছাড়াই গর্ভপাতের প্রশ্নে পরিবর্তন আনা সম্ভব। এর মাধ্যমে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো হয়তো ততটা দৃশ্যমান হবে না, কিন্তু এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।

হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেওয়া প্রতিটি সিদ্ধান্তই আমেরিকার জনগণের প্রতি তাঁর অঙ্গীকারের প্রতিফলন। তারা মনে করে, এই নিয়োগগুলো সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

উল্লেখ, সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যে ‘রো বনাম ওয়েড’ মামলার রায় বাতিল করে গর্ভপাতের অধিকার খর্ব করেছে।

গর্ভপাত বিরোধী সংগঠনগুলো ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে এবং ভবিষ্যতে একই ধরনের বিচারপতি নিয়োগের প্রত্যাশা করছে। অন্যদিকে, গর্ভপাতের অধিকার রক্ষা বিষয়ক সংগঠনগুলো এই নিয়োগকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছে।

তাদের মতে, ট্রাম্প একদিকে যেমন গর্ভপাতের বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন, তেমনই বিচার বিভাগে চরমপন্থী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছেন।

এই ঘটনার আন্তর্জাতিক গুরুত্বও রয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের রায় ও সিদ্ধান্তগুলো অনেক সময় অন্যান্য দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপরও প্রভাব ফেলে। তাই, এই বিষয়গুলো বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *