যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংখ্যালঘু-প্রধান অঞ্চলে দূষণ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চুক্তি বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তের ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।
মূলত, দেশটির আলাবামা অঙ্গরাজ্যের লোন্ডেস কাউন্টিতে, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষের বাস, সেখানকার দূষণ সমস্যার সমাধানে একটি চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এটিকে ‘অবৈধ’ হিসেবে উল্লেখ করে বাতিল করে দেয়।
লোন্ডেস কাউন্টি, যা মন্টোগোমারি শহর থেকে প্রায় ৪০ মাইল দূরে অবস্থিত, সেখানকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছেন। এখানকার অনেক বাড়িতেই পয়ঃনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই বা থাকলেও তা ত্রুটিপূর্ণ।
এর ফলে, মানুষের বাড়ির উঠোনে এমনকি ঘরের ভেতরেও raw sewage বা অপরিশোধিত পয়ঃপ্রণালী উপচে পড়ে। এখানকার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বরং নতুন পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন করতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে, বাইডেন প্রশাসন আলাবামার কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছিল। এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল পরিবেশগত অবিচার দূর করা।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এই চুক্তিটিকে ‘বৈচিত্র্য, সাম্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক’ (Diversity, Equity, and Inclusion – DEI) নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ‘অবৈধ’ চুক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না যা DEI নীতির সঙ্গে জড়িত।
তাদের মূল লক্ষ্য হল প্রত্যেক নাগরিকের প্রতি সম্মান জানানো এবং জনগণের অর্থে পরিচালিত সরকারি কার্যক্রম জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রাখা।
লোন্ডেস কাউন্টির মাটি কাদাযুক্ত হওয়ায় সেখানে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা কঠিন। এখানকার অধিকাংশ বাড়িতে পৌরসভার নর্দমা সংযোগ নেই, তাই বাসিন্দাদের পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ব্যয়বহুল সেপটিক সিস্টেমের উপর নির্ভর করতে হয়।
এখানকার মানুষজন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এখানে এমন কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে যা একসময় আমেরিকাতে প্রায় নির্মূল হয়ে গিয়েছিল।
এখানকার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, বাসিন্দাদের খেলার মাঠ, স্কুল এমনকি ঘরের ভেতরেও raw sewage-এর দূষণ দেখা যায়।
এই অঞ্চলের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। সেখানকার স্থানীয় কর্মকর্তারা বাসিন্দাদের সমস্যা সমাধানে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেননি।
বরং তাদের হয়রানি করেছেন। সেখানকার পরিবেশকর্মী ক্যাথরিন ফ্লাওয়ার্স, যিনি নিজেও লোন্ডেস কাউন্টিতে বেড়ে উঠেছেন, তিনি বলেন, “এই অঞ্চলের মানুষজন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।”
তাদের একটাই আশা, হয়তো কোনোভাবে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে।
আলাবামা অঙ্গরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, তাদের কাছে তহবিল থাকলে তারা বাসিন্দাদের সমস্যা সমাধানে কাজ চালিয়ে যাবে। তবে, এই বিষয়ে এখনো কোনো নিশ্চয়তা নেই।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান