ট্রাম্পের চাঞ্চল্যকর সিদ্ধান্ত! LGBTQ+ যুবকদের জন্য হটলাইন পরিষেবা বন্ধ?

যুক্তরাষ্ট্রের একটি জরুরি সহায়তা কেন্দ্র, যা আত্মহত্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে, আগামী ১৭ই জুলাই থেকে তাদের বিশেষ ‘এলজিবিটিকিউ+’ তরুণ-তরুণীদের জন্য পৃথক পরিষেবা বন্ধ করে দিচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে উদ্বেগে পড়েছেন অধিকারকর্মীরা। খবরটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।

৯৮৮ ন্যাশনাল সুইসাইড অ্যান্ড ক্রাইসিস লাইনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপটি নেওয়া হয়েছে কারণ তারা এখন থেকে বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর জন্য আলাদা পরিষেবা দিতে চায় না। তাদের লক্ষ্য হলো, সবার জন্য সহায়তা নিশ্চিত করা।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ পরিষেবাটির মাধ্যমে প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষকে সহায়তা করা হয়েছে। ফোন করার সময় ‘৩’ চাপলে অথবা টেক্সট মেসেজে ‘প্রাইড’ লিখলে এই পরিষেবা পাওয়া যেত।

এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে ‘দ্য ট্রেভর প্রজেক্ট’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেমস ব্ল্যাক বলেছেন, “আত্মহত্যা প্রতিরোধের বিষয়টি রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়। একটি কার্যকরী এবং পরীক্ষিত পরিষেবা, যা ঝুঁকিপূর্ণ তরুণদের কঠিন সময়ে সাহায্য করেছে, তা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দুঃখজনক।” ট্রেভর প্রজেক্ট, এলজিবিটিকিউ+ কমিউনিটির জন্য ৯৮৮ হটলাইনের মাধ্যমে সংকটকালীন সহায়তা প্রদানকারী সাতটি কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের অধীনস্থ সংস্থা ‘সাবস্টেন্স অ্যাবিউজ অ্যান্ড মেন্টাল হেলথ সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এসএএমএইচএসএ) জানিয়েছে, তারা এখন থেকে ‘এলজিবি+’ তরুণদের পরিষেবা দেওয়ার দিকে মনোযোগ দেবে। তবে, ব্ল্যাক এই অংশে ‘টি’ শব্দটি বাদ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, “ট্রান্সজেন্ডার (রূপান্তরকামী) মানুষজন কোনোভাবেই মুছে যেতে পারে না।”

অন্যদিকে, আত্মহত্যা বিষয়ক একটি সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৯,৩০০ জন আত্মহত্যা করেছেন, যা দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। গবেষণায় দেখা গেছে, এলজিবিটিকিউ+ তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর একটি বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত বছর ২৬ শতাংশ রূপান্তরকামী ও জেন্ডার-বিষয়ক পরিচয়ে সন্দেহ পোষণকারী শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। যেখানে, এই হার সাধারণ (সিসেণ্ডার) পুরুষ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ শতাংশ এবং নারী শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে এলজিবিটিকিউ+ বিরোধী বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। ট্রাম্পের পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার পরে সংকটকালীন সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে তরুণ রূপান্তরকামীদের ফোনকলের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল।

এসএএমএইচএসএ জানিয়েছে, এলজিবিটিকিউ+ বিষয়ক বিশেষ প্রোগ্রামটির জন্য ২০২৪ অর্থবছরে ৩ কোটি ৩০ লক্ষ মার্কিন ডলার খরচ হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০২৬ সালের বাজেট প্রস্তাবে ৯৮৮-এর মোট বাজেট ৫২ কোটি মার্কিন ডলার রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে, যদিও এলজিবিটিকিউ+ বিষয়ক পরিষেবাটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র এসএএমএইচএসএ সহ অন্যান্য সংস্থাগুলোকে একটি নতুন ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফর এ হেলদি আমেরিকা’ নামক অফিসের অধীনে একত্রিত করার পরিকল্পনা করছেন।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *