ট্রাম্পের আমেরিকায় মাওয়ের ছায়া? বিস্ফোরক বিশ্লেষণ!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক উত্থান এবং তাঁর বিভিন্ন বিতর্কিত পদক্ষেপের মাঝে চীনের অনেক পর্যবেক্ষক তাদের প্রাক্তন নেতা মাও সেতুংয়ের শাসনের ছায়া খুঁজে পাচ্ছেন। তাঁদের মতে, ট্রাম্পের কিছু নীতি এবং কর্মকাণ্ড যেন চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কথা মনে করিয়ে দেয়।

এই বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন আলোচনা ও বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুং ছিলেন এক শক্তিশালী নেতা। তাঁর আমলে চীনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল, যা সাংস্কৃতিক বিপ্লব নামে পরিচিত।

সেই সময়ে মাও সমাজের পুরনো ধ্যান-ধারণা ভেঙে নতুন করে সমাজ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। অনেক চীনা নাগরিকের মনে হয়, ট্রাম্পও অনেকটা সে রকমই করছেন।

তাঁরা মনে করেন, ট্রাম্পের বিভিন্ন পদক্ষেপ, যেমন – বুদ্ধিজীবীদের প্রতি অনাস্থা, পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বল করা এবং নিজের প্রতি একটি শক্তিশালী ভাবমূর্তি তৈরি করা – এগুলো মাওয়ের শাসনের সঙ্গে মিলে যায়।

হংকংয়ের একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডিধারী, ড. ডিং জিউলিয়াং, ট্রাম্পের মধ্যে মাওয়ের শাসনের কিছু প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেয়েছেন।

তিনি মনে করেন, যদিও দুই নেতার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে, তবুও তাঁদের মধ্যে কিছু মিল রয়েছে।

যেমন, দুজনেই সমাজের প্রভাবশালী অংশের প্রতি সন্দেহ পোষণ করতেন এবং সাধারণ মানুষের কাছে তাঁদের কথা পৌঁছে দিতেন।

সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় মাও ‘পুরোনোকে ধ্বংস করো’ নীতি নিয়ে পুরাতন রীতিনীতি, সংস্কৃতি ও ধ্যান-ধারণা ভেঙে নতুন সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। ট্রাম্পও যেন অনেকটা সেই পথেই হাঁটছেন।

তিনি বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়েছেন, পুরনো নীতি পরিবর্তন করেছেন এবং দেশের শ্রমিকদের অধিকারের কথা বলেছেন।

চীনের অনেক মানুষ মনে করেন, ট্রাম্প আমেরিকার ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছেন, যা প্রকারান্তরে চীনের জন্য উপকারী।

তাঁরা ট্রাম্পকে ‘চুয়ান জিয়ানগুও’ বা ‘রাষ্ট্র নির্মাতা’ নামে ডাকতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ আবার ট্রাম্পের ক্ষমতা বিস্তারের প্রবণতা এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টার সমালোচনা করেছেন।

তাঁরা মনে করেন, এর মাধ্যমে আমেরিকায় এক ধরনের ‘আমেরিকান স্টাইলের সাংস্কৃতিক বিপ্লব’-এর সূচনা হতে পারে।

তবে, ট্রাম্পের সময়কালের সঙ্গে মাওয়ের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের একটি বড় পার্থক্য হলো— মাওয়ের আমলে ব্যাপক সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছিল, যেখানে কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

ট্রাম্পের সময়ে তেমনটা ঘটেনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই ধরনের নীতি বিশ্বজুড়ে আমেরিকার ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। অনেকে মনে করেন, আমেরিকা এখন তার গণতন্ত্রের আদর্শ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

তবে তাঁরা এও মনে করেন, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমেরিকা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *