মাস্ককে ছাড়তে পারবেন না ট্রাম্প: আসল কারণ!

শিরোনাম: ট্রাম্প-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা কি এত সহজ? এলন মাস্ক-এর উপর আমেরিকার নির্ভরশীলতা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এলন মাস্ক-এর মধ্যেকার সম্পর্ক এখন টালমাটাল। কিন্তু তাদের এই মনোমালিন্য সত্ত্বেও, ট্রাম্পের পক্ষে মাস্ককে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া সহজ নয়।

কারণ, মহাকাশ গবেষণা থেকে শুরু করে ইন্টারনেট পরিষেবা— বহু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আমেরিকার সরকার মাস্কের কোম্পানিগুলির উপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

একসময়, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের জন্য মাস্ক বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেছিলেন। বিনিময়ে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের সুযোগ ও সরকারি নিয়মকানুন সহজ করার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাদের এই ঘনিষ্ঠতা এখন অতীতের স্মৃতি।

সমালোচকদের মতে, ট্রাম্প যদি প্রতিশোধ নিতে চান, তাহলে মাস্কের বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। যেমন, সরকারি চুক্তি বাতিল করা অথবা স্পেসএক্স-এর (SpaceX) গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু এমনটা করলে তা হবে অত্যন্ত কঠিন এবং সুদূরপ্রসারী।

আসলে, নাসা (NASA) এবং পেন্টাগন-এর (Pentagon) মতো সরকারি সংস্থাগুলো স্পেসএক্স-এর রকেট ও স্যাটেলাইটের উপর নির্ভরশীল। এছাড়া, স্টারলিঙ্ক (Starlink) নামক ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংযোগ স্থাপন করতেও এই কোম্পানিটির জুড়ি নেই।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্পেসএক্স-এর সঙ্গে নাসা এবং পেন্টাগনের প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি রয়েছে। বোয়িং-এর (Boeing) মতো অন্য কোনো কোম্পানির পক্ষে এই মুহূর্তে স্পেসএক্স-কে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (International Space Station) নভোচারী পাঠানোর ক্ষেত্রে বোয়িংয়ের স্টারলাইনার (Starliner) মহাকাশযানে সমস্যা দেখা গিয়েছিল।

বর্তমানে, মার্কিন সরকার মহাকাশ স্টেশনটিকে (ISS) পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এই কাজটি করার জন্য স্পেসএক্স-কে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এমনকি, ২০৩০ সালের শুরুতেই এই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।

শুধু তাই নয়, যদি যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে মঙ্গলে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করে, সেক্ষেত্রে স্পেসএক্সের স্টারশিপ (Starship) একমাত্র উপযুক্ত যান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। চাঁদে অবতরণের জন্য স্পেসএক্স-এর সঙ্গে ৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। সামরিক বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণেও স্পেসএক্স-এর জুড়ি নেই।

এছাড়াও, মার্কিন বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (FAA) জন্য প্রযুক্তি আপগ্রেড করার কাজও করছে স্টারলিঙ্ক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প যদি মাস্কের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেন, তবে তা হবে অনেকটা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের (Vladimir Putin) মতো, যেখানে সরকারের সমর্থন না থাকলে ব্যবসায়ীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন।

প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিক কারা সুইশারের (Kara Swisher) মতে, ট্রাম্প যদি মাস্কের কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন, তবে তিনি স্বৈরাচারের মতো আচরণ করবেন। এটি কেবল মাস্কের কোম্পানিগুলোর ক্ষতি করবে না, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সুতরাং, ট্রাম্প এবং মাস্কের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করা সহজ নয়। কারণ, বিভিন্ন সরকারি এবং সামরিক গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য আমেরিকার সরকার মাস্কের কোম্পানিগুলোর উপর নির্ভরশীল।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *