বাজারের ভয়াবহ পতনেও ট্রাম্পকে সমর্থন, রক্ষণশীল মিডিয়ার ভূমিকা!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি নিয়ে যখন বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়, তখন দেশটির রক্ষণশীল গণমাধ্যমগুলো কীভাবে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল, সেই চিত্র ফুটে উঠেছে। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ববাজারে বড় ধরনের দরপতন হয় এবং অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা এর তীব্র সমালোচনা করেন।

কিন্তু অনেক প্রভাবশালী মিডিয়া, বিশেষ করে ফক্স নিউজ, বিষয়টিকে হয় এড়িয়ে গেছে, নয়তো ট্রাম্পের পক্ষেই সাফাই গেয়েছে।

এই ঘটনাগুলো এমন এক সময়ে ঘটেছিল, যখন ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেন। এর ফলস্বরূপ, শেয়ার বাজারে বড় ধরনের ধস নামে, যা কোভিড-১৯ মহামারীর পর সবচেয়ে বড় পতন ছিল।

অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছিলেন যে এই শুল্কের কারণে মন্দা দেখা দিতে পারে। এমনকি রিপাবলিকান দলের কিছু সদস্যও এর বিরোধিতা করেন।

যেমন, সিনেটর টেড ক্রুজ ও র্যান্ড পল এই শুল্ককে আমেরিকানদের জন্য কর বৃদ্ধির শামিল বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু ফক্স নিউজের মতো প্রভাবশালী মিডিয়াগুলো, যাদের দর্শক সংখ্যা অনেক বেশি, ট্রাম্পের পক্ষেই অবস্থান নেয়।

অনেক ক্ষেত্রে তারা বিষয়টিকে হালকাভাবে উপস্থাপন করে অথবা ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপকে সমর্থন করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফক্স নিউজসহ অন্যান্য রক্ষণশীল মিডিয়া ট্রাম্পের প্রতি তাদের আনুগত্যের কারণে বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে গেছে। যদিও এই শুল্ক নীতির কারণে বিনিয়োগকারীদের সঞ্চয়েও প্রভাব পড়েছিল, অনেক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব বিষয়টিকে সেভাবে গুরুত্ব দেননি।

উদাহরণস্বরূপ, একটি অনুষ্ঠানে ফক্স নিউজের একজন উপস্থাপিকা বলেছিলেন, তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের (৪0১(কে)) বিষয়ে চিন্তিত নন।

অন্যদিকে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতো কিছু সংবাদ মাধ্যম এই নীতির সমালোচনা করে। তারা সম্পাদকীয় নিবন্ধে ট্রাম্পের নীতির কারণে অর্থনীতির ওপর যে প্রভাব পড়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে।

এছাড়া, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি যেমন বেন শাপিরো, শুল্ক নীতির ভালো-মন্দ দিকগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

তবে, ট্রাম্পের সমর্থক হিসেবে পরিচিত মিডিয়াগুলো সাধারণত তাঁর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে। অনেক ক্ষেত্রে, তারা ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপকে একটি ‘নতুন সোনালী যুগের’ সূচনা হিসেবে বর্ণনা করেছে।

সংবাদ বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট খবর পরিবেশন, বিশেষ করে যখন বাজারের অস্থিরতা বাড়ছে, তখন তা উদ্বেগের কারণ।

বাণিজ্য যুদ্ধের এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাজারে প্রবেশাধিকার কঠিন হয়ে পড়েছে, যা তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর আমাদের দেশের অর্থনীতি অনেকখানি নির্ভরশীল। বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের গুরুত্ব আরও বেড়েছে, যাতে সাধারণ মানুষ সঠিক তথ্য জানতে পারে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *