ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বিশেষ ভোজে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যেখানে তার ক্রিপ্টোকারেন্সি ‘মেম কয়েন’-এর শীর্ষ বিনিয়োগকারীরা একত্রিত হয়েছিলেন। তবে এই আয়োজন ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন, যার প্রধান কারণ হলো এই ডিনারে অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছিল।
এই গোপনীয়তার সুযোগ নিয়ে বিদেশি নাগরিকেরা কি সহজে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারতেন? এমন প্রশ্ন উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, বিদেশি নাগরিকদের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে।
এই ডিনার সেই বিধিনিষেধকে উপেক্ষা করার একটি সম্ভাবনা তৈরি করেছে বলে অনেকে মনে করছেন। জানা গেছে, ট্রাম্পের ‘মেম কয়েন’-এর শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশই বিদেশি।
এদের মধ্যে একজন প্রভাবশালী চীনা নাগরিকও রয়েছেন, যিনি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে দেওয়ানি মামলার সম্মুখীন হয়েছিলেন। অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় ওয়াশিংটন ডিসির বাইরে, ট্রাম্প ন্যাশনাল গলফ ক্লাবে।
সেখানে শীর্ষ ‘$TRUMP’ কয়েন ক্রেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এই কয়েন মূলত বিনোদনমূলক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হলেও, এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এই ডিনারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং শীর্ষ ২২০ জন ‘$TRUMP’ কয়েনের মালিকদের যোগ দেওয়ার কথা ছিল। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে, কয়েনটির শীর্ষ ২৫ জন মালিক পরদিন হোয়াইট হাউসে একটি ব্যক্তিগত সফরে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান, যা সাধারণত কেবল রাষ্ট্রপ্রধানদের জন্য সংরক্ষিত থাকে।
এই ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রকল্পের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৪ কোটি ৮০ লক্ষ মার্কিন ডলার। তবে, ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ঝুঁকি এবং এর অস্থিরতা অনেককে শঙ্কিত করে তোলে।
কারণ, এর মূল্য দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন সাধারণত বেনামী হওয়ার কারণে, শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের শনাক্ত করা কঠিন।
তবে, ব্লুমবার্গ নিউজের একটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শীর্ষ ২৫ জন ‘$TRUMP’ কয়েন হোল্ডারের মধ্যে ৬ জন বাদে সবাই বিদেশি এক্সচেঞ্জ ব্যবহার করেছেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দাদের জন্য সাধারণত নিষিদ্ধ। এমনকি শীর্ষ ২২০ জন হোল্ডারের অর্ধেকের বেশি একই ধরনের অফশোর এক্সচেঞ্জ ব্যবহার করেছেন।
এই ধরনের আয়োজন ট্রাম্প প্রশাসনের নৈতিকতার সীমারেখা লঙ্ঘন করেছে বলে অনেকে মনে করেন। ডেমোক্রেট সিনেটর ক্রিস মারফি বলেছেন, এই ধরনের ডিনার বিদেশি নাগরিকদের জন্য প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের একটি সুযোগ তৈরি করে।
রিপাবলিকান সিনেটর সিনথিয়া লুমিসও এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে একটি সংগঠন, পাবলিক সিটিজেন, গলফ মাঠের বাইরে বিক্ষোভের আয়োজন করে।
তারা বিচার বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ট্রাম্পকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানায়। এই ডিনারে চীনা বংশোদ্ভূত ক্রিপ্টো উদ্যোক্তা জাস্টিন সান-এর উপস্থিতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান, ট্রাম্পকে সমর্থন করতে পেরে তিনি সম্মানিত এবং এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আনন্দিত। জানা গেছে, জাস্টিন সান ‘$TRUMP’ কয়েনে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন।
২০২৩ সালে, মার্কিন নিয়ন্ত্রকরা জাস্টিন সান এবং তার কোম্পানির বিরুদ্ধে অনিবন্ধিত সিকিউরিটি বিক্রি এবং ডিজিটাল টোকেন ‘ট্রনিক্স’-এর দাম কারসাজির অভিযোগ এনেছিল। যদিও পরে, এই অভিযোগের বিষয়ে পদক্ষেপ স্থগিত করা হয়।
জাস্টিন সান-এর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ এবং তার ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। এই ঘটনার মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং রাজনৈতিক সংযোগের মধ্যেকার সম্পর্ক নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যকলাপ আরও স্বচ্ছ হওয়া উচিত, যাতে করে বিদেশি প্রভাবের সুযোগ কমে আসে এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমে জনগণের আস্থা বজায় থাকে। তথ্য সূত্র: সিএনএন