মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানসিক স্বাস্থ্যহীন এবং আশ্রয়হীন মানুষের জন্য প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাসপাতালে ভর্তি এবং চিকিৎসার পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। যদিও ট্রাম্প এই পদক্ষেপকে জননিরাপত্তার জন্য জরুরি বলছেন, তবে তার এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন বেশ কঠিন হতে পারে কারণ মানসিক স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ এখনো পর্যাপ্ত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় আশ্রয়হীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশের গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। এদের একটি অংশ সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডারসহ অন্যান্য মানসিক রোগে আক্রান্ত। সম্প্রতি শার্লটে একটি ট্রেনের ঘটনা এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যেখানে মানসিক স্বাস্থ্যহীন এক ব্যক্তি একজন নারীকে হত্যা করে। এই ঘটনার পর মানসিক স্বাস্থ্য এবং আশ্রয়হীনতা মোকাবিলায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে।
ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় জর্জরিত আশ্রয়হীন ব্যক্তিদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি মানসিক রোগীদের জন্য ‘পাগলা গারদ’ পুনরায় চালু করারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত বেড ও জনবল নেই।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১ লক্ষ মানুষের জন্য মাত্র ১৮টি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বেড রয়েছে, যেখানে বিশেষজ্ঞদের মতে কমপক্ষে ৬০টি বেডের প্রয়োজন। এছাড়া, গুরুতর মানসিক রোগে আক্রান্ত প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ কোনো চিকিৎসা পান না। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে যারা ইতোমধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি হবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের প্রশাসন একইসাথে স্বাস্থ্যখাতে বিভিন্ন কর্মসূচি ও সহায়তা কমাচ্ছে, যা তার এই পরিকল্পনাকে দুর্বল করে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মেডিকেড, যা মানসিক স্বাস্থ্যসেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস, তা থেকে আগামী এক দশকে প্রায় ৯০০ বিলিয়ন ডলার কাটার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও, আশ্রয়হীনদের জন্য ‘হাউজিং ফার্স্ট’ নীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু কর্মসূচি থেকেও অর্থ সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে শুধু হাসপাতালে ভর্তি করাটাই যথেষ্ট নয়। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ, যেমন – উপযুক্ত আবাসনের ব্যবস্থা করা, মানসিক স্বাস্থ্য কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং স্বেচ্ছায় চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ তৈরি করা।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা এবং নীতি নির্ধারকদের মতে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। স্বেচ্ছায় চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহিত করা এবং সেই অনুযায়ী সুযোগ তৈরি করা দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফল দিতে পারে।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের এমন পদক্ষেপের ফলে মানসিক স্বাস্থ্যখাতে আরও বেশি সংকট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, বিদ্যমান কর্মসূচিগুলোর দুর্বলতা এবং নতুন করে অর্থ বরাদ্দের অভাব এই পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন