যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর ঘিরে নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। এই সফরের মধ্যেই ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসা এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি খাতে এই অঞ্চলের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সমালোচকদের মতে, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতে প্রভাব পড়তে পারে, যা ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসায়িক স্বার্থকে আরও বেশি সুবিধা দেবে।
ট্রাম্পের এই সফরের আগে তাঁর দুই ছেলে এরিক ট্রাম্প এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রাচ্যে একাধিকবার সফর করেছেন। তাঁরা দুবাইয়ে একটি ৮০ তলা ট্রাম্প টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।
এছাড়া, দুবাইতে অনুষ্ঠিত একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্মেলনেও যোগ দেন তাঁরা। এই সম্মেলনে ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইনান্সিয়াল নামক একটি ক্রিপ্টো ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের ছেলে, জ্যাক উইটকফও উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসায়িক স্বার্থ শুধু রিয়েল এস্টেটেই সীমাবদ্ধ নয়। কাতারে একটি বিলাসবহুল গলফ রিসোর্ট নির্মাণের জন্য কাতার সরকারের মালিকানাধীন একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।
এছাড়া, সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদেও দুটি নতুন আবাসন প্রকল্পে ব্র্যান্ড নাম ব্যবহারের চুক্তি করেছে ট্রাম্প অর্গানাইজেশন। এই অঞ্চলে ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসা সম্প্রসারণের বিষয়টি এমন সময়ে সামনে আসছে, যখন ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার চেষ্টা করছেন।
জানা গেছে, আবুধাবির একটি সরকারি বিনিয়োগ কোম্পানি, ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইনান্সিয়ালের ‘USD’ নামক একটি স্ট্যাবলকয়েনকে সমর্থন করে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ, বিনান্স-এ ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে রাজি হয়েছে।
সমালোচকেরা বলছেন, এর মাধ্যমে ট্রাম্প পরিবারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বিনিয়োগের একটি অংশ পেতে পারেন। এছাড়াও, সৌদি সরকার সমর্থিত ‘Liv Golf’-এর সঙ্গেও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
এমনকি, ট্রাম্পের ফ্লোরিডার ডোরার রিসোর্টে এই গলফ টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প পরিবারের এই ব্যাপক ব্যবসায়িক সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাত তৈরি করতে পারে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কেমন হবে, তা হয়তো ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসায়িক স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, ট্রাম্প ব্যক্তিগত লাভের জন্য কোনো কাজ করছেন না এবং তিনি সব ধরনের স্বার্থ-সংঘাত বিষয়ক আইন মেনে চলছেন।
তবে, ট্রাম্পের এই সফর এবং তাঁর পরিবারের ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক এখনো চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়নে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থের প্রভাব থাকবে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।