মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্প: প্রযুক্তি চুক্তিতে বাজিমাত, ভবিষ্যৎ অর্থনীতির চাবিকাঠি?

ডোনাল্ড ট্রাম্প, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়েছিলেন, সঙ্গে ছিলেন শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীরা। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় দেশগুলোতে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি সরবরাহ এবং এর মাধ্যমে দেশগুলোর অর্থনীতিকে তেলের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে দূরে সরিয়ে আধুনিকায়নে সহায়তা করা।

এই সফরে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সৌদি আরবে ট্রাম্পের এই সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন এনভিডিয়া, এএমডি এবং কোয়ালকমের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা।

চুক্তি অনুযায়ী, এই কোম্পানিগুলো সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশটির বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে অত্যাধুনিক এআই প্রযুক্তি সরবরাহ করবে। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো, সৌদি আরবের অর্থনীতিকে তেলের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে বের করে আনা এবং প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন নির্ভর একটি ভবিষ্যৎ তৈরি করা।

এর অংশ হিসেবে সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ) একটি নতুন এআই স্টার্টআপ ‘হুমাইন’ প্রতিষ্ঠা করেছে, যা এই অঞ্চলের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এনভিডিয়া, যারা এআই চিপ বাজারের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি, হুমাইনের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সৌদি আরবে ‘এআই ফ্যাক্টরি’ তৈরি করবে।

এই ফ্যাক্টরিগুলোতে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। এনভিডিয়া সেখানে তাদের তৈরি অত্যাধুনিক গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) সরবরাহ করবে।

এছাড়াও, এএমডি এবং কোয়ালকমও এই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। এএমডি’র পক্ষ থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি চুক্তি হয়েছে এবং কোয়ালকমও এআই ডেটা সেন্টার তৈরি করতে হুমাইনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

ট্রাম্পের এই সফর এবং চুক্তিগুলো বাইডেন প্রশাসনের নীতি থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।

বাইডেন প্রশাসন পূর্বে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক কিছুটা শীতল করে রেখেছিল।

তবে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এছাড়াও, এই চুক্তিগুলো বিশ্ব বাজারে এআই প্রযুক্তির প্রভাব আরও বাড়িয়ে তুলবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে, সংযুক্ত আরব আমিরাতও (ইউএই) তাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে আগ্রহী।

এপ্রিল ২০২৪-এ, মাইক্রোসফ্ট আবুধাবি ভিত্তিক একটি এআই গ্রুপ, জি৪২-এ ১.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা করেছে।

যদিও, জি৪২-এর সঙ্গে চীনা সামরিক কোম্পানি এবং গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে, তবে মাইক্রোসফ্ট তাদের সঙ্গে চুক্তি করার সময় চীনা হার্ডওয়্যার সরবরাহকারীদের এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই চুক্তিগুলো কেবল প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ।

এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব আরও সুসংহত করতে চাইছে।

এই অঞ্চলের দেশগুলোও তাদের অর্থনীতিকে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে একটি নতুন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে চাইছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *