ফের মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্প: চমক অপেক্ষা করছে?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর: নতুন করে সম্পর্কের বাঁধন, নাকি পুরোনো সমীকরণ?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সফরে মধ্যপ্রাচ্য যাচ্ছেন। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো, গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা এবং বিশ্ব মঞ্চে একজন প্রভাবশালী দর কষাকষিকারীর পরিচয় দেওয়া।

মঙ্গলবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে পৌঁছে তিনি কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতেও যাবেন।

এই সফরকে বিশ্লেষকরা ট্রাম্পের আগের মেয়াদের মধ্যপ্রাচ্য সফরের সঙ্গে তুলনা করছেন। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সফরের মাধ্যমে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে একটি সমৃদ্ধ ও সফল ভবিষ্যৎ দেখতে চান, যেখানে বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বাড়বে এবং চরমপন্থাকে পরাজিত করা যাবে।

তবে, ট্রাম্পের এই সফরের প্রেক্ষাপট আগের চেয়ে অনেক ভিন্ন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইসরায়েল-হামাস সংঘাত বিশ্ব অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলোতেও এসেছে নতুন মেরুকরণ। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের এই সফর কয়েকটি অর্থনৈতিক সাফল্যের সুযোগ তৈরি করতে পারে এবং গভীর অংশীদারিত্বের দিকগুলো তুলে ধরতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই সফরের সময় অনেক কিছুই প্রকাশ্যে নাও আসতে পারে। তবে, তাঁর সফরসঙ্গীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং বিনিয়োগের ঘোষণা দিতে পারেন।

শোনা যাচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসন সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে অর্থনৈতিক চুক্তি করতে চাইছে, যা আমেরিকার বিনিয়োগ বাড়াতে সাহায্য করবে।

এছাড়াও, ট্রাম্পের এই সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু আলোচনা। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ বর্তমানে ইরানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এই আলোচনাকে সমর্থন জানাচ্ছে, কারণ তারা ইরানের সঙ্গে কোনো যুদ্ধ চায় না।

তবে, ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি কেমন হবে, সে বিষয়ে তাঁদের মধ্যে কিছু দ্বিধা রয়েছে।

সফরের সময় ট্রাম্পের দল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে তেলের দাম কমানোর জন্য চাপ দিতে পারে। কারণ, নির্বাচনের আগে ট্রাম্প এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

এছাড়া, এই সফরে কাতার থেকে একটি বিলাসবহুল বিমান উপহার হিসেবে গ্রহণ করার বিষয়টিও বেশ আলোচিত হচ্ছে। এটিকে ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

তবে, এই ধরনের উপহার গ্রহণ করা হলে তা নৈতিক এবং আইনি প্রশ্ন তৈরি করতে পারে।

এই সফরে ইসরায়েলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর গাজায় যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় ইসরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া এখনো কঠিন হয়ে আছে।

তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের উপদেষ্টারা ধারণা করছেন, এই সফরের মাধ্যমে আব্রাহাম চুক্তির পরিধি আরও বাড়ানো যেতে পারে।

সফরের সময় ট্রাম্পের সঙ্গে থাকবেন তাঁর মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

তবে, তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনার সম্ভবত এই সফরে যোগ দেবেন না।

মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের এই সফর বিভিন্ন দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এটি একদিকে যেমন পুরোনো সম্পর্ককে ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ, তেমনই নতুন করে সম্পর্কের সমীকরণ তৈরিরও সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। এখন দেখার বিষয়, এই সফরের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সম্পর্ক কতটা গভীর হয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *