ট্রাম্পের সফরে মধ্যপ্রাচ্যে কি বিশাল বিনিয়োগের সম্ভাবনা?

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর: বিনিয়োগের হাতছানি ও অস্ত্র চুক্তির অঙ্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে সফর করেছেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা। এই সফরে তিনি সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এর মতো ধনী দেশগুলোর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

সফরের শুরুতেই ট্রাম্প রিয়াদে পৌঁছান, যেখানে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তাকে স্বাগত জানান। এই সফরে বিভিন্ন বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়, এবং ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প উপসাগরীয় দেশগুলোকে তেলের দাম কমানোর জন্য চাপ দিতে পারেন।

জানা গেছে, এই অঞ্চলের দেশগুলো থেকে ট্রাম্প ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ পেতে আগ্রহী।

২০১৭ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময়েও মধ্যপ্রাচ্য সফর বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেই সময় তিনি রিয়াদ সম্মেলনে যোগ দেন, যেখানে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার এবং বড় আকারের অস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

ওই সফরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনও ভ্রমণ করেন তিনি। রিয়াদ সম্মেলনে তৎকালীন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এবং ট্রাম্পের মধ্যে ১১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি হয়, যার মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ট্যাংক, যুদ্ধ জাহাজ ও সাইবার নিরাপত্তা প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ধারণা করা হচ্ছে, ১০ বছরে প্রায় ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা ছিল।

বর্তমানে সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১.৩ বিলিয়ন ডলারে। অন্যদিকে, সৌদি আরবের এফডিআই যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৯.৬ বিলিয়ন ডলার, যা পরিবহন, রিয়েল এস্টেট, প্লাস্টিক, অটোমোবাইল, আর্থিক পরিষেবা এবং যোগাযোগের মতো খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে।

কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের এফডিআই প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার। কাতার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩.৩ বিলিয়ন ডলার, যা মূলত আর্থিক পরিষেবা, জ্বালানি এবং রিয়েল এস্টেটে কেন্দ্রীভূত।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে যুক্তরাষ্ট্রের এফডিআই ১৬.১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এখানে ম্যানুফ্যাকচারিং, ফিনান্স ও ইন্স্যুরেন্স, নির্মাণ এবং পাইকারি ও খুচরা বাণিজ্য খাতে মূল বিনিয়োগ দেখা যায়।

অন্যদিকে, ইউএই-এর এফডিআই যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ বিলিয়ন ডলার, যা আর্থিক পরিষেবা, পরিবহন, খাদ্য ও পানীয়, মহাকাশ এবং ব্যবসায়িক পরিষেবা খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। মার্চ মাসে, ইউএই-এর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তাহনুন বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আগামী ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রকে ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর, জ্বালানি এবং উৎপাদন খাতে ব্যবহৃত হবে।

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী অস্ত্র রপ্তানির শীর্ষ দেশ এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রধান সরবরাহকারী। কাতার ও সৌদি আরব বিশ্বে অস্ত্র আমদানির দিক থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে।

এই দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র কেনে। শুধু তাই নয়, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের মোট অস্ত্র রপ্তানির প্রায় ১২ শতাংশ গ্রহণ করেছে।

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র কাতারকে ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি বড় অস্ত্রের প্যাকেজ অনুমোদন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ-পাল্লার সামুদ্রিক নজরদারি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা।

এই সফরকালে ট্রাম্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বৃহত্তর বিনিয়োগ নিশ্চিত করা। মধ্যপ্রাচ্যে বিনিয়োগের এই নতুন দিগন্ত ভবিষ্যতে দুই পক্ষের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *