মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে অপরাধ দমনের উদ্দেশ্যে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। লস অ্যাঞ্জেলেস এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান তিনি। তবে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে অনেক বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয় নেতারা মনে করেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের পরিপন্থী। তারা বলছেন, কোনো শহরে সামরিক বাহিনী পাঠালে তা হবে নজিরবিহীন। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের একটি গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক এলিজাবেথ গয়টেইন সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “সামরিক বাহিনীকে অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে ব্যবহার করা হলে তা নিপীড়নের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। আর ট্রাম্প ঠিক সেই কাজটিই করতে চাইছেন।
ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে, গত সপ্তাহে জানা যায় যে, প্রশাসন শিকাগোতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করার বিষয়ে আলোচনা করছে। যদিও কবে নাগাদ এই সেনা মোতায়েন শুরু হবে বা কত সৈন্য পাঠানো হবে, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি।
সোমবার, ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যেখানে শহরগুলোতে অপরাধ মোকাবেলা করার জন্য ন্যাশনাল গার্ডের “বিশেষায়িত ইউনিট” তৈরির কথা বলা হয়েছে। তবে এই আদেশ কিভাবে কার্যকর করা হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের আগে তিনি হয়তো গভর্নরদের অনুরোধের জন্য অপেক্ষা নাও করতে পারেন। “আমরা সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারি, সম্ভবত সেটাই করা উচিত,” তিনি যোগ করেন।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অনেক শহরের মেয়র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। শিকাগোর মেয়র ব্রেন্ডন জনসন একে অসাংবিধানিক এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ইলিনয়ের গভর্নর জেবি প্রিটজকার বলেছেন, “মি. প্রেসিডেন্ট, শিকাগোতে আসার চেষ্টা করবেন না। এখানে আপনাকে প্রয়োজন নেই।” তিনি আরও বলেন, “এটা অপরাধ দমনের বিষয় নয়, বরং ডোনাল্ড ট্রাম্প তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর জন্য একটি নীল রাজ্যে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে চাইছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বিষয়ক একটি গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক ডেভিড জানোভস্কি সতর্ক করে বলেছেন, শহরগুলোতে সেনা মোতায়েন একটি “বিপজ্জনক পরিস্থিতি” তৈরি করতে পারে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের আইনি ভিত্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তিনি কিভাবে সামরিক বাহিনী ব্যবহার করতে পারেন, সে বিষয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বিদ্রোহ দমন বা আইন প্রয়োগের জন্য প্রেসিডেন্টের সামরিক বাহিনী ব্যবহারের ক্ষমতা সীমিত।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসমের আইনজীবীরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দশম সংশোধনীর লঙ্ঘন। কারণ, এই সংশোধনী অনুযায়ী, রাজ্যের নিজস্ব সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ‘অভয়ারণ্য শহর’ নামে পরিচিত কিছু শহরে ফেডারেল ইমিগ্রেশন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সীমিত সহযোগিতা করার নিয়ম রয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ন্যাশনাল গার্ড এইসব শহরকেও টার্গেট করতে পারে।
তবে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই এখনো চলমান। লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে একটি মামলা চলছে, যা ভবিষ্যতে তার অন্যান্য পদক্ষেপের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন