সিনেমা শুল্কের হুমকি: ট্রাম্পের চালে কি ভাঙন?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র শিল্পের উপর শুল্ক আরোপের প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চলচ্চিত্র শিল্পের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

তার এই প্রস্তাবনাটি বাস্তবায়িত হলে হলিউডের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এবং এর ফলস্বরূপ অন্যান্য দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের পরিষেবা রপ্তানির ওপর প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।

ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম চলচ্চিত্র শিল্পকে সহায়তা করার জন্য ফেডারেল ট্যাক্স ক্রেডিট বা কর ছাড়ের প্রস্তাব করেছেন। এই প্রস্তাব অনুসারে, চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহ দিতে ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে ৭.৫ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে।

যদিও ট্রাম্প এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি, তবে তিনি চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি এই প্রস্তাবনার বিষয়ে তাদের মতামত জানতে চাইছেন।

তবে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে রয়েছেন। এই প্রস্তাবনার প্রেক্ষাপটে, চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে হলিউড বর্তমানে একটি বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

বিভিন্ন বিদেশি শহর, যেমন টরন্টো এবং ডাবলিনে, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন স্টুডিওগুলোকে আকৃষ্ট করার জন্য আকর্ষণীয় কর সুবিধা দেওয়া হয়। এর ফলে অনেক প্রযোজনা সংস্থা তাদের চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য এই শহরগুলোতে যাচ্ছে।

এটিকে ‘রানওয়ে প্রোডাকশন’ বা উৎপাদন স্থানান্তর হিসেবেও চিহ্নিত করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি সত্যিই এই শুল্ক আরোপ করা হয়, তবে এর ফলে চলচ্চিত্র শিল্পের উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

কারণ, এই ধরনের শুল্ক আরোপ করা অত্যন্ত জটিল এবং তা কার্যকর করা কঠিন হবে। তাছাড়া, এর ফলে চলচ্চিত্র নির্মাণের খরচ অনেক বেড়ে যাবে, যা দর্শকদের জন্য টিকিটের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হতে পারে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পরিষেবা-নির্ভর হওয়ায় এই ধরনের শুল্ক আরোপের ফলে দেশটির পরিষেবা খাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র পরিষেবা খাতে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানিকারক দেশ এবং এই ধরনের বাণিজ্য নীতির কারণে অন্যান্য দেশগুলো এর প্রতিশোধ নিতে পারে।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, চলচ্চিত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন কোম্পানি, যেমন নেটফ্লিক্স, ডিজনি এবং ওয়ার্নার ব্রোস.-এর শেয়ারের দামে পতন দেখা গেছে।

এই ঘটনার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, চলচ্চিত্রগুলো মূলত একটি ‘সার্ভিস’ বা পরিষেবা হিসেবে বিবেচিত হয়, কোনো পণ্য হিসেবে নয়। তাই, শুল্ক আরোপ করতে গেলে চলচ্চিত্রের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করা এবং কোন ধরনের বিদেশি প্রযোজনাকে আমদানি হিসেবে গণ্য করা হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।

বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানা গেছে। তবে এই ধরনের শুল্ক আরোপের প্রস্তাবনা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *