মার্কিন বিচারকদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প-মাস্কের যুদ্ধ: ভয়ানক বিপদ?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিচারকদের উপর ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের আক্রমণের সমর্থনে রিপাবলিকানদের এগিয়ে আসা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ট্রাম্প এবং মাস্ক, দুজনেই এমন সব বিচারকদের তীব্র সমালোচনা করছেন, যারা ট্রাম্পের কিছু নির্বাহী আদেশ স্থগিত করেছেন অথবা মাস্কের ফেডারেল এজেন্সিগুলোতে কাটছাঁট করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন।

বিষয়টি এখন মার্কিন রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনায় রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতারাও ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন এবং বিচার বিভাগীয় কমিটির চেয়ারম্যান জিম জর্ডানসহ আরও অনেকে ট্রাম্পের সুরে সুর মিলিয়েছেন। জানা গেছে, টেক বিলিয়নেয়ার ইলন মাস্ক রিপাবলিকান রাজনীতিবিদদের প্রচুর অনুদান দিয়েছেন, যা সমালোচিত বিচারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তাদের উৎসাহিত করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মাস্কের এই আর্থিক সমর্থন রিপাবলিকান প্রার্থীদের জন্য আগামী নির্বাচনে সুবিধা নিয়ে আসবে। কারণ, মাস্ক বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং গত বছর ট্রাম্পকে জেতাতে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন।

এর ফলে, ট্রাম্প ও মাস্কের সমালোচক বিচারকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে রিপাবলিকানদের উপর চাপ আরও বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিচারকদের উপর ট্রাম্প ও তার মিত্রদের আক্রমণের কারণ হলো, কিছু আদালতের রায় যা ট্রাম্পের বিভিন্ন নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে গেছে।

এর মধ্যে রয়েছে ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত কিছু আইনি firm-কে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করা সংক্রান্ত বিষয়। উদাহরণস্বরূপ, বিচারক জেমস বোয়াসবার্গ ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর বিরুদ্ধে রায় দেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প তাকে ‘বামপন্থী উন্মাদ’ বলে অভিহিত করেন এবং তার অভিশংসন ও পদচ্যুতির দাবি জানান। মাস্কও তার সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’-এ (সাবেক টুইটার) এমন বিচারকদের অভিশংসনের আহ্বান জানিয়েছেন, যাদের রায় তার পছন্দ হয়নি।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিচারকদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প ও মাস্কের এই ধরনের হুমকি আইনের শাসনের পরিপন্থী। তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করছে এবং সাংবিধানিক নীতিগুলোকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসও বলেছেন, বিচারিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে অভিশংসন কোনো সমাধান হতে পারে না। এমনকি, বিচারকদের কার্যক্রম সীমিত করতে রিপাবলিকানরা বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা ভাবছেন।

এর মধ্যে একটি হলো, বিচারকদের দেওয়া দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞার ক্ষমতা সীমিত করা। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে (House of Representatives) ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি বিল উত্থাপনের প্রস্তুতি চলছে।

কিছু প্রাক্তন রিপাবলিকান সদস্য ট্রাম্পের মিত্রদের এই ধরনের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, রিপাবলিকান পার্টি ট্রাম্পের প্রতি অন্ধ আনুগত্য দেখাচ্ছে এবং বিচারকদের আক্রমণের মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে।

তারা আশঙ্কা করছেন, এই পরিস্থিতি দেশের জন্য গুরুতর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিচারকদের উপর আক্রমণ ট্রাম্পের ক্ষমতা বিস্তারের বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ।

এর মাধ্যমে তিনি অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দুর্বল করতে এবং বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে চাইছেন। তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *