মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে সম্প্রতি কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বাড়িতে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে, যেখানে জরুরি পরিষেবা কর্মীরা মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ছুটে গিয়েছেন। ‘সোয়াটিং’ নামে পরিচিত এই অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িত সন্দেহে ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) তদন্ত শুরু করেছে।
খবর অনুযায়ী, ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক এবং ইলেকট্রিক গাড়ি প্রস্তুতকারক টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্কের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ রাখেন। সোয়াটিং হলো এমন একটি কাজ যেখানে কেউ জরুরি বিভাগে ফোন করে একটি ভীতিকর পরিস্থিতির মিথ্যা বিবরণ দেয়, যার ফলস্বরূপ পুলিশ বা অন্যান্য জরুরি বিভাগের কর্মীরা ভুক্তভোগীর বাড়িতে ছুটে যান।
পরিস্থিতি এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন সেখানে মারাত্মক কোনো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। আলাবামার বাসিন্দা ল্যারি টোন্টন নামের একজন ভুক্তভোগী জানান, তিনি গভীর রাতে ঘুমের মধ্যে ছিলেন, যখন তার কুকুর অস্থির হয়ে ওঠে।
তিনি দেখেন, তার বাড়ির দরজায় ভারী পোশাক পরা একজন লোক একটি আধা-স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে নিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করছে। টোন্টন তৎক্ষণাৎ তার বন্দুক বের করেন। পরে জানা যায়, তারা ছিলেন পুলিশ। পুলিশ জানায়, তাদের কাছে খবর ছিল যে কয়েকজন লোক তাদের বাড়িতে ঢুকে পড়েছে এবং সবাইকে হত্যা করছে।
উত্তর ক্যারোলিনার বাসিন্দা এরিন ডেরহাম নামের আরেকজন ভুক্তভোগী জানান, তিনিও একই ধরনের অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন। তার বাড়িতেও গভীর রাতে পুলিশ আসে, কারণ জরুরি বিভাগে ফোন করে জানানো হয়েছিল যে তার স্বামী নিহত হয়েছেন এবং তিনি গুরুতর আহত অবস্থায় আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, সোয়াটিং একটি গুরুতর অপরাধ এবং এর কারণে জীবনহানির ঝুঁকিও থাকে। এর আগে, ২০১৭ সালে অনলাইনে গেমারদের একটি দল মিথ্যা খবর ছড়িয়ে দিলে পুলিশের গুলিতে অ্যান্ড্রু ফিনচ নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল।
২০২০ সালে, টেনেসির ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি সোয়াটিং-এর শিকার হয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এই ধরনের ঘটনার নিন্দা করেছে। কর্মকর্তাদের মতে, সোয়াটিং শুধু ভুক্তভোগীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে না, বরং জরুরি বিভাগের মূল্যবান সময় নষ্ট করে এবং তাদের জীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই ধরনের কাপুরুষোচিত কাজের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এফবিআই পরিচালক কাশ্যপ প্যাটেলও জানিয়েছেন, দোষীদের জবাবদিহি করার জন্য তারা কাজ করছেন।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, সোয়াটিং তাদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করলেও তারা তাদের রাজনৈতিক অবস্থান থেকে সরবেন না। তারা মনে করেন, এই ধরনের হয়রানি তাদের কণ্ঠরোধ করতে পারবে না। তথ্যসূত্র: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।