শনির পরেই কি এবার মঙ্গলের পালা? ট্রাম্পের নাসার প্রধানের বিস্ফোরক ঘোষণা!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র প্রধান হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত ব্যক্তি, জারেড আইজ্যাকম্যান, সম্ভবত সংস্থাটির ভবিষ্যৎ রূপরেখা তৈরি করতে চলেছেন। আসন্ন শুনানিতে তিনি সম্ভবত চাঁদের বদলে মঙ্গলে অভিযানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ইঙ্গিত দেবেন।

জানা গেছে, আইজ্যাকম্যান-এর এই সিদ্ধান্তের ফলে নাসার ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।

আইজ্যাকম্যান একজন সফল ব্যবসায়ী, যিনি পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম কোম্পানি শিফট৪-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) হিসাবে পরিচিত। তিনি ব্যক্তিগতভাবে স্পেসএক্স-এর মহাকাশ অভিযানেও অংশ নিয়েছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, বুধবারের শুনানিতে তিনি বিস্তারিতভাবে নাসার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরবেন।

নাসার নতুন প্রধানের সম্ভাব্য এই পরিবর্তনের ইঙ্গিতের কারণ হিসেবে জানা যায়, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং স্পেসএক্স-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) ইলন মাস্ক-এর মঙ্গল গ্রহের প্রতি বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। মাস্ক দীর্ঘদিন ধরেই মঙ্গলে মানুষের স্থায়ী বসতি স্থাপনের স্বপ্ন দেখেন।

এই কারণে, আইজ্যাকম্যান-এর সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের পেছনে মাস্কের প্রভাব থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। মাস্ক সম্প্রতি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন।

অন্যদিকে, নাসার বর্তমান আর্টেমিস প্রোগ্রাম, যা চাঁদে নভোচারী পাঠানোর পরিকল্পনা করছে, তাতে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে, রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ-এর মতো কেউ কেউ চান, নাসা যেন চাঁদের দিকেই মনোযোগ বজায় রাখে।

ক্রুজ মনে করেন, চাঁদে অভিযান অব্যাহত রাখা জরুরি, কারণ এটি মঙ্গলে যাওয়ার প্রযুক্তিগত ভিত্তি তৈরি করবে।

এই পরিস্থিতিতে, আইজ্যাকম্যান কিভাবে চাঁদের অভিযান এবং মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার পরিকল্পনার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, তিনি যে নাসা-র চিরাচরিত প্রধানদের থেকে ভিন্ন, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

সাধারণত, এই পদে বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী বা সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হয়। কিন্তু আইজ্যাকম্যান-এর এই পদে মনোনয়ন বেশ অপ্রত্যাশিত।

শোনা যাচ্ছে, আইজ্যাকম্যান শুনানিতে বলবেন যে তিনি “একজন সাধারণ প্রার্থী নন”। তিনি নিজেকে একজন বিজ্ঞানী বা নাসা-র কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন না।

তিনি মনে করেন, এই দুর্বলতাগুলোই সম্ভবত তার প্রধান শক্তি। তিনি আরও বলেন, তিনি মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অভিযানে তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান – আর তা হলো মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচন করা।

আইজ্যাকম্যানের মনোনয়ন নিয়ে অনেকের মধ্যে সন্দেহ থাকলেও, মহাকাশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকে তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। বেশ কয়েকজন সাবেক নভোচারীও সিনেট কমিটিকে চিঠি লিখে আইজ্যাকম্যানকে সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে, আইজ্যাকম্যানের মনোনয়ন কিছু ক্ষেত্রে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে, স্পেসএক্সে তার বিনিয়োগ এবং ইলন মাস্কের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মাস্ক সম্প্রতি সরকারি কার্যকারিতা বিভাগ (Department of Government Efficiency বা DOGE) নামে একটি নতুন বিভাগ তৈরি করেছেন, যা সরকারি ব্যয় কমানোর চেষ্টা করছে।

সমালোচকদের মতে, মাস্ক এই বিভাগের মাধ্যমে স্পেসএক্সের জন্য সুবিধা আদায় করতে পারেন। স্পেসএক্সের সঙ্গে নাসার বিলিয়ন ডলারের চুক্তি রয়েছে।

এছাড়াও, নাসার অভ্যন্তরে কর্মী ছাঁটাই এবং বাজেট কমানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, বিজ্ঞান গবেষণার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণও কমানো হতে পারে।

নাসার ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এখনো অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে। আইজ্যাকম্যান যদি চূড়ান্তভাবে এই পদে বহাল হন, তাহলে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (International Space Station বা ISS)-এর ভবিষ্যৎ নিয়েও নতুন করে আলোচনা শুরু হতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *