যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে অভিবাসন নীতির প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বাড়ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাজ্যটির ন্যাশনাল গার্ডকে ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
খবর অনুযায়ী, এই পদক্ষেপের ফলে রাজ্যের গভর্নর গ্যাভিন নিউসামের ক্ষমতা খর্ব হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ন্যাশনাল গার্ড মূলত রাজ্যের সামরিক রিজার্ভ বাহিনী হিসেবে কাজ করে। সাধারণত, এই বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রাজ্যের গভর্নরের হাতে থাকে।
কিন্তু ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে তা সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে চলে আসবে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল।
হোয়াইট হাউজ এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে বিক্ষোভের তীব্রতা এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কথা উল্লেখ করেছে। তবে, সমালোচকদের মতে, এই পদক্ষেপ প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং রাজ্যের স্বায়ত্তশাসনের প্রতি আঘাত।
বিশেষ করে, লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসন বিভাগের অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে সামরিক বাহিনীর এই হস্তক্ষেপ গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, জরুরি অবস্থা তৈরি হলে প্রেসিডেন্ট ন্যাশনাল গার্ডকে ব্যবহারের নির্দেশ দিতে পারেন। তবে, এক্ষেত্রে রাজ্যের গভর্নরের সম্মতি প্রয়োজনীয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নিউসাম ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন এবং এটিকে “ক্ষমতার অপব্যবহার” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, ফেডারেল সরকার রাজ্যের সম্মতি ছাড়াই সেনা মোতায়েন করেছে এবং তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থাও করেনি।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এর আগেও প্রেসিডেন্টরা বিভিন্ন সময়ে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ মোকাবেলায় ন্যাশনাল গার্ডের সাহায্য নিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৫৭ সালে, আরকানসাসের লিটল রকে শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনা মোতায়েন করেছিলেন।
একইভাবে, ১৯৬০-এর দশকে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সময়ও এমন ঘটনা ঘটেছিল।
তবে, ট্রাম্পের বর্তমান পদক্ষেপটি অতীতের ঘটনাগুলোর থেকে ভিন্ন। কারণ, তিনি এখনো পর্যন্ত “ইনসাররেকশন অ্যাক্ট” (Insurrection Act) প্রয়োগ করেননি, যা অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমনের জন্য সামরিক বাহিনীকে ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
এই আইনের প্রয়োগ না করা সত্ত্বেও ন্যাশনাল গার্ডকে মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত অনেককে বিস্মিত করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে। কারণ, এর মাধ্যমে তিনি অভিবাসন নীতির বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিতে চাইছেন।
একইসাথে, এর মাধ্যমে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা আরও সুসংহত করতে চাইছেন। যদিও এই সিদ্ধান্তের কারণে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সঙ্গে ফেডারেল সরকারের সম্পর্ক আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমানে, ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য ফেডারেল সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, প্রশ্ন উঠেছে, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার নামে সামরিক বাহিনীর ব্যবহার কতটুকু যৌক্তিক?
গণতন্ত্রে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং জনগণের অধিকার রক্ষার বিষয়টি এক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন