ঐতিহ্য রক্ষার লড়াই: আদিবাসী প্রতীকের সমর্থনে ট্রাম্পের আগ্রাসী পদক্ষেপ!

দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকার স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সম্মান নিয়ে চলা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এসে দাঁড়িয়েছে নিউ ইয়র্কের একটি স্কুল। মাসাপেকুয়া চিফ্স নামের একটি স্কুল তাদের লোগো এবং নামের পরিবর্তন করতে অস্বীকার করায় প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন লাভ করেছে। এই ঘটনাটি বর্তমানে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

নিউ ইয়র্ক রাজ্য সরকার আদিবাসী সংস্কৃতিকে অপমান করে এমন মাসকট বা প্রতীক ব্যবহার নিষিদ্ধ করার নির্দেশ জারি করে। রাজ্যের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মাসাপেকুয়া স্কুল কর্তৃপক্ষ আদালতে মামলা করে। তাদের দাবি, এই নিষেধাজ্ঞা বৈষম্যমূলক এবং অসাংবিধানিক। তবে, স্কুলের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এই ইস্যুতে মাসাপেকুয়া স্কুলের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাঁর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিউ ইয়র্কের এই সিদ্ধান্ত ১৯৬৪ সালের নাগরিক অধিকার আইনের ষষ্ঠ ধারা লঙ্ঘন করে। এই আইনের মাধ্যমে জাতি, বর্ণ বা জাতীয়তার ভিত্তিতে কোনো ধরনের বৈষম্য করা নিষিদ্ধ। এই যুক্তির ভিত্তিতে, কেন্দ্রীয় সরকার মাসাপেকুয়ার পক্ষ নিয়েছে এবং রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে।

মাসাপেকুয়া চিফ্সের লোগোতে একজন আদিবাসী আমেরিকানকে হলুদ পালকের শিরস্ত্রাণ পরে থাকতে দেখা যায়। সমালোচকদের মতে, এই ধরনের চিত্র আদিবাসী সংস্কৃতির ভুল উপস্থাপনা। আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনেকেই মনে করেন, খেলাধুলার জন্য তাদের সংস্কৃতিকে ব্যবহার করা অপমানজনক।

আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন এই বিতর্কে বিভক্ত। কেউ কেউ মাসকট ব্যবহারের পক্ষে, আবার অনেকে এর বিরোধিতা করছেন। আদিবাসী আমেরিকান গার্ডিয়ান্স অ্যাসোসিয়েশন (NAGA) নামের একটি সংগঠন মাসকট ব্যবহারের পক্ষে তাদের সমর্থন জানাচ্ছে। তাদের মতে, এই ধরনের প্রতীক আদিবাসী সংস্কৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। অন্যদিকে, অনেক আদিবাসী নেতা এই ধরনের মাসকট ব্যবহারের তীব্র বিরোধিতা করে একে তাঁদের সংস্কৃতির প্রতি অবমাননাকর হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

নিউ ইয়র্কের শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, তারা এই বিষয়ে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে এবং স্কুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে। মাসকট পরিবর্তনের জন্য স্কুলটিকে সময় দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা তা করতে রাজি হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে, স্কুলটি সম্ভবত রাজ্যের তহবিল হারানো এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের পদচ্যুতির মতো শাস্তির সম্মুখীন হতে পারে।

এই বিতর্কের সূত্রপাত হয় যখন ওয়াশিংটন রেডস্কিন্স নামক একটি আমেরিকান ফুটবল দল তাদের নাম পরিবর্তন করে। এরপর অন্যান্য খেলাধুলার দলগুলিও একই পথে হাঁটা শুরু করে। নিউ ইয়র্ক সহ আরও দশটি রাজ্যে আদিবাসী মাসকট ব্যবহারের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে মাসাপেকুয়ার ঘটনাটি এই বিতর্ককে আরও তীব্র করে তুলেছে এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি লড়াইয়ের দিকে মোড় নিচ্ছে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *