যুদ্ধবিরতি: ট্রাম্পের আশায় জল, নেতানিয়াহুর সফরে কি মিলল?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা আবারও ব্যর্থ হল। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পরেও গাজায় যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।

বরং, ট্রাম্পের প্রত্যাশা ছিল, নেতানিয়াহুর এই সফরকালে অন্তত ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হবে। কিন্তু সেই বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।

হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। তবে, এই আলোচনার ফল এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে পরিচিত হতে চান এবং এর মাধ্যমে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চান। কিন্তু গাজায় চলমান যুদ্ধ তার সেই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হচ্ছে। প্রথমত, হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের গভীর বিরোধ।

হামাস এখনো গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং সকল জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার শর্তে অনড় রয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলও হামাসকে নির্মূল করার আগে যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি নয়।

দ্বিতীয়ত, নেতানিয়াহু অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপে রয়েছেন। দেশের ভেতরে যুদ্ধ বন্ধের জন্য যেমন চাপ রয়েছে, তেমনি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেও একটি শক্তিশালী অংশ রয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিও জানিয়েছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে তারা আগের চেয়ে “কাছাকাছি” এসেছেন। তবে, এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

ট্রাম্প নিজেও যুদ্ধ বন্ধ করতে আগ্রহী এবং এ বিষয়ে অনেক সময় ও শ্রম ব্যয় করেছেন।

অন্যদিকে, নেতানিয়াহুও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি এক দিকে যেমন ট্রাম্পের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছেন, তেমনি গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াটাও তার জন্য জরুরি।

সম্প্রতি, তিনি সাংবাদিকদের সামনে ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার ঘোষণা দেন। এছাড়াও, তিনি একটি “অস্থায়ী” ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন, যার বিনিময়ে গাজা থেকে জিম্মিদের অর্ধেক মুক্তি দেওয়া হবে।

তবে, হামাস অস্ত্র ত্যাগ না করা পর্যন্ত তিনি কোনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি নন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নেতানিয়াহু পরিস্থিতি বিবেচনা করে অত্যন্ত সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তিনি একদিকে যেমন ট্রাম্পকে খুশি রাখতে চাইছেন, তেমনি ইসরায়েলের নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বজায় রাখতে চাইছেন।

বর্তমানে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল রূপ নিয়েছে। একদিকে যেমন জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধ বন্ধের দাবি উঠছে, তেমনি উভয় পক্ষই নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ।

এমতাবস্থায়, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *