ট্রাম্পের নির্দেশে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের পথে নেতানিয়াহু, বাড়ছে ইসরায়েল-মার্কিন সম্পর্কে ফাটল
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বন্ধ করার এবং ইরানের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়া থেকে বিরত থাকার কথা বলেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র মারফত এই খবর জানা গেছে। সোমবার দুই নেতার মধ্যে ফোনালাপ হয়।
ট্রাম্প পরে জানান, তাদের মধ্যে ‘খুব ভালো’ আলোচনা হয়েছে।
এই ফোনালাপ এমন এক সময়ে হয়েছে যখন ওয়াশিংটন ইরানকে সঙ্গে নিয়ে একটি পরমাণু চুক্তি করার চেষ্টা করছে এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য হামাসের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই আহ্বান ইসরায়েলের নীতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
এদিকে, নেতানিয়াহু মঙ্গলবার রাতে তার শীর্ষ মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনা এবং পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সা’রও জানান, যুদ্ধবিরতির আলোচনা ইতিবাচক দিকে যাচ্ছে, যেখানে গাজায় বন্দী ইসরায়েলি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, হামাস জানিয়েছে, তারা মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে এখনো আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে ইসরায়েলি হামলা থেকে সুরক্ষার আরও বেশি নিশ্চয়তা চাইছে তারা। হামাসের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা খলিল আল-হাইয়া এক টেলিভিশন ভাষণে জানান, তারা উইটকফের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেননি, বরং নিরাপত্তা বিষয়ক আরও কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
হামাস চাইছে, এই চুক্তিতে গাজায় যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি এবং ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার অন্তর্ভুক্ত করা হোক।
গাজা যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে মতবিরোধ বাড়ছে, যা এরই মধ্যে ২০ মাস পার করেছে। নেতানিয়াহু স্পষ্ট করেছেন যে তার যুদ্ধ-লক্ষ্য হলো হামাসকে সম্পূর্ণরূপে নিরস্ত্র করা এবং তাদের ক্ষমতা থেকে সরানো।
অন্যদিকে ট্রাম্প এই যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে বিভেদ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বাড়ছে। সম্প্রতি, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলকে এড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যে সফর করে, ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে, যা ইসরায়েলের ওপর তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়।
এছাড়াও, সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে, যদিও ইসরায়েল সাবেক জিহাদিদের দ্বারা পরিচালিত একটি সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প বলেছেন, তার প্রশাসন ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তি করার চেষ্টা করছে, যাতে সেখানে ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানি এড়ানো যায়। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ষষ্ঠ দফা আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
আলোচনার সময় ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে ইরানের ওপর হামলার পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি সম্পর্কিত খবর প্রকাশ করা বন্ধ করতে বলেন। নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে বারবার মত দিয়েছেন।
সূত্র মারফত আরও জানা গেছে, নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে বলেছিলেন, ইরান কেবল সময়ক্ষেপণ করছে এবং আলোচনার ব্যাপারে তাদের কোনো আগ্রহ নেই।
ট্রাম্প প্রশাসন ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’ প্রসারিত করারও চেষ্টা করছে। এই চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েল সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে।
তবে সৌদি আরব, যাদের সঙ্গে এই ধরনের চুক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, তারা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে রাজি নয়।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি এই সপ্তাহে বলেছেন, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান এখন মার্কিন নীতির লক্ষ্য নয়, যা এতদিন পর্যন্ত রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় প্রশাসনেরই লক্ষ্য ছিল।
তথ্য সূত্র: সিএনএন