যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি আবার ক্ষমতায় আসেন, তাহলে তিনি সকল আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা করছেন। এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্পের এই ‘ইউনিভার্সাল ট্যারিফ’ নীতি বাস্তবায়িত হলে, যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে, তার ওপর করের বোঝা বাড়বে। এর ফলে, বিশ্ব বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এই পরিকল্পনার মূল বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করতে চাওয়া সব পণ্যের ওপর কর আরোপ করা হবে। ট্রাম্পের আগের মেয়াদেও কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছিল, তবে এবারকার প্রস্তাবটি অনেক বেশি বিস্তৃত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাণিজ্য নীতিতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হতে পারে।
অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্ব বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং এর ফলে অনেক দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। বিশেষ করে, যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে পণ্য রপ্তানি করে, তাদের জন্য এটি উদ্বেগের কারণ। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, চামড়া ও পাটজাত পণ্যের মতো রপ্তানি খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে, যা সেখানকার ক্রেতাদের কাছে আমাদের পণ্যের চাহিদা কমাতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যদি পণ্যের দাম বাড়ে, তাহলে সেখানকার ভোক্তারা অন্য কোনো দেশের দিকে ঝুঁকতে পারে, অথবা তাদের ক্রয় ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলস্বরূপ, বিভিন্ন দেশ প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করতে পারে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করবে।
তবে, শুল্ক আরোপের ফলে কিছু সুবিধা পাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে স্থানীয় পণ্যের চাহিদা বাড়তে পারে। এছাড়া, যেসব কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য তৈরি করে, তারা হয়তো সুবিধা পেতে পারে।
বর্তমানে, বিশ্ব অর্থনীতি নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব এখনো কাটেনি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি বিশ্ব অর্থনীতিকে আরও অস্থির করে তুলতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হবে। সরকারের উচিত হবে, পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (World Trade Organization – WTO) সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া, বিকল্প বাজার অনুসন্ধান এবং দেশের রপ্তানি খাতকে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে, সিএনএন-এর একটি প্রতিবেদন সহায়তা করেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন