নিউ ইয়র্কে ট্রাম্পের আঘাত: কী হতে চলেছে?

ট্রাম্পের নীতিমালার কোপে নিউ ইয়র্ক শহর: উদ্বেগে শহরবাসী

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিগুলি বর্তমানে নিউ ইয়র্ক শহরের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে বাণিজ্য নীতি, অভিবাসন বিষয়ক পদক্ষেপ এবং ফেডারেল হস্তক্ষেপের হুমকি—শহরটির অর্থনীতি, সামাজিক সুরক্ষা এবং ভবিষ্যতের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

নিউ ইয়র্ক সিটির অর্থনীতি ইতিমধ্যেই কোভিড-১৯ অতিমারীর ধাক্কা কাটিয়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। শ্রম বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের মার্চ ও এপ্রিল মাসে শহরটি তার ২৩ শতাংশ কর্মসংস্থান হারিয়েছিল। তবে বর্তমানে মহামারীর আগের তুলনায় প্রায় ২ লক্ষ বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

কিন্তু ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ সেই অর্জিত সুবিধাগুলি দুর্বল করে দিচ্ছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে নিউ ইয়র্কের ব্যবসাগুলিতে মাত্র ৯৫৬টি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, যা কয়েক দশকের মধ্যে মন্দা বাদে সর্বনিম্ন।

আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি, ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিও নিউ ইয়র্ক শহরের অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই শহরের প্রায় ৬ লক্ষ ৭০ হাজার অবৈধ অভিবাসী শ্রমশক্তির সঙ্গে যুক্ত।

এদের মধ্যে ৮০ শতাংশ খাদ্য পরিষেবা, নির্মাণ ও স্বাস্থ্যখাতে কাজ করেন। ট্রাম্পের নীতির কারণে, হিস্পানিক পুরুষদের মধ্যে কর্মসংস্থানের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিসেবে জোরান মামদানি জয়লাভ করেছেন। তিনি শহরের জীবনযাত্রার ব্যয় হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলি, বিশেষ করে ফেডারেল বাজেট কর্তন, মামদানির এই লক্ষ্যকে কঠিন করে তুলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা শহরবাসীর জন্য স্বাস্থ্যবিমা, খাদ্য সহায়তা এবং আবাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলিতে প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের “ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল” নামে পরিচিত একটি বিল নিউ ইয়র্কের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে। এই বিলের কারণে ১৫ লক্ষ নিউ ইয়র্কবাসী স্বাস্থ্যবিমা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন এবং প্রায় ৩ লক্ষ পরিবার খাদ্য সহায়তার সুবিধা হারাবেন।

এছাড়াও, রাজ্যের স্বাস্থ্যখাতে ১৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ কাটার আশঙ্কা রয়েছে, যার ফলে প্রায় ২ লক্ষ মানুষের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

নিউ ইয়র্ক রাজ্যের কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, ফেডারেল সাহায্য হ্রাসের কারণে রাজ্যের বাজেট ঘাটতি ৩৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে, যা ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর সর্বোচ্চ। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার রাজস্ব এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসন এর আগে নিউ ইয়র্কের যানজট নিরসন প্রকল্পের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছিল এবং পরিবহন খাতে ফেডারেল অর্থ সহায়তা বন্ধ করারও হুমকি দিয়েছিল। এই ধরনের পদক্ষেপগুলি শহরের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

নিউ ইয়র্ক শহরের অনেক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করেছেন। তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ট্রাম্পের নীতিগুলি শহরের অর্থনীতি ও সামাজিক কাঠামোকে দুর্বল করে দেবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *