শিরোনাম: পারমাণবিক শক্তিতে ঝাঁপাচ্ছে ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য: ২০ বছরে চারগুণ উৎপাদন।
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে: প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন দ্রুত বাড়ানোর লক্ষ্যে বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এর মূল লক্ষ্য হলো আগামী ২৫ বছরের মধ্যে দেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকে চারগুণ বৃদ্ধি করা।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে একদিকে যেমন বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে, তেমনি প্রযুক্তিগত দৌড়ে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায়ও সুবিধা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
শুক্রবার (অনুমান) স্বাক্ষরিত এই নির্বাহী আদেশগুলির মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করা হবে। এর ফলে, বর্তমানে বিদ্যমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা, নিউক্লিয়ার রেগুলেটরি কমিশন (এনআরসি)-এর ক্ষমতা হ্রাস করে কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি জ্বালানি সচিবের অনুমোদন নেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
সমালোচকদের মতে, এর ফলে নিরাপত্তা মান দুর্বল হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় ১৯ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে পারমাণবিক চুল্লি থেকে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে আসে প্রায় ৬০ শতাংশ এবং নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসে ২১ শতাংশ।
ট্রাম্পের এই নতুন পদক্ষেপের ফলে, বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)-এর মতো প্রযুক্তি খাতের বিকাশে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে, দেশটির অভ্যন্তরীণ বিভাগের সচিব ডগ বার্গাম বলেন, “আমরা যদি আগামী পাঁচ বছরে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে পারি, তবে এটি শিল্পখাতে আগামী ৫০ বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।
তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত দ্রুত পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো কঠিন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে নতুন প্রজন্মের কোনো পারমাণবিক চুল্লি বাণিজ্যিকভাবে চালু নেই।
গত প্রায় ৫০ বছরে হাতে গোনা কয়েকটি নতুন চুল্লি তৈরি হয়েছে, যেগুলিও সময়মতো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি এবং নির্মাণ ব্যয়ও অনেক বেড়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, জর্জিয়ার একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ শেষ হতে অনেক দেরি হয়েছিল এবং এর ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।
আদেশগুলোতে এনআরসি-কে পারমাণবিক প্রকল্পগুলোর দ্রুত অনুমোদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে, ২০২৩ সালের জুলাই মাসের মধ্যে তিনটি নতুন পরীক্ষামূলক চুল্লি চালু করারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, জরুরি পরিস্থিতিতে ইউরেনিয়ামসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ নিশ্চিত করতে ‘প্রতিরক্ষা উৎপাদন আইন’-এর ব্যবহারেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ফলে পুরনো পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পুনরায় চালু করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এবং ফেডারেল ভূমি ও সামরিক ঘাঁটিতে নতুন চুল্লি স্থাপনেরও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
তবে, এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে অনেকে বলছেন, এর ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কা বাড়বে। সমালোচকদের মতে, এনআরসি-এর স্বাধীনতা খর্ব করা হলে, তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকারিতা কমিয়ে দেবে।
বারাক ওবামার আমলে এনআরসি-র প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা গ্রেগরি জ্যাজকো বলেছেন, ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশ দেখে মনে হচ্ছে, কেউ যেন একটি এআই চ্যাটবটকে জিজ্ঞেস করেছে, “কীভাবে এই দেশে পারমাণবিক শিল্পের আরও ক্ষতি করা যায়?”
অন্যদিকে, পারমাণবিক শক্তিকে সমর্থনকারীরা বলছেন, এই পদক্ষেপ পারমাণবিক শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
ক্যালিফোর্নিয়ার একটি স্টার্টআপ, রেডিয়েন্ট নিউক্লিয়ারের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা টরি শিবানন্দান এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশ বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে নতুন প্রজন্মের ছোট আকারের পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের দিকে ঝুঁকছে।
কানাডার অন্টারিও প্রদেশে এরই মধ্যে চারটি ছোট চুল্লি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশের জন্য এই খবরটি খুবই প্রাসঙ্গিক।
কারণ, বাংলাদেশও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে নিজস্ব পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস