মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিচারক, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে অভিবাসন সংক্রান্ত নীতির সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের আদালত অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। এই ঘটনা প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রশাসনের বিতর্কিত কিছু পদক্ষেপের ফলস্বরূপ।
বিচারক জেমস বোয়াসবার্গ বুধবার এক রায়ে বলেছেন, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার মতো যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
আদালতের তথ্য অনুযায়ী, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ভেনেজুয়েলার কিছু নাগরিককে বিতাড়িত করার জন্য একটি বিশেষ আইনের অপব্যবহার করেছিলেন। এই বিতাড়ন প্রক্রিয়াটি আদালতের একটি সাময়িক নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন ছিল।
বিচারক বোয়াসবার্গ তাঁর ৪৬ পৃষ্ঠার রায়ে উল্লেখ করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হয় ওই ব্যক্তিদের ফেরত পাঠাবেন, যাদের বিতাড়ন করার কথা ছিল, অথবা আদালত অবমাননার অভিযোগের সম্মুখীন হবেন।
বিচারক আরও সতর্ক করে বলেন, যদি প্রশাসন এই আদালত অবমাননার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে, অথবা বিচার বিভাগকে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে নিষেধ করে, তাহলে তিনি নিজেই একজন স্বাধীন কৌঁসুলি নিয়োগ করবেন। বিচারক তাঁর মন্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, আদালত সহজে বা তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হন না।
তিনি অভিযুক্তদের তাঁদের কাজের ব্যাখ্যা করার পর্যাপ্ত সুযোগ দিয়েছেন, কিন্তু তাঁদের কোনো জবাবই সন্তোষজনক ছিল না।
আদালত অবমাননার এই হুমকি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা প্রয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করে। তিনি তাঁর নির্বাহী ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে, যথাযথ বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে, ভেনেজুয়েলার কিছু নাগরিককে বিতাড়িত করার জন্য ১৯১৮ সালের ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’-এর অপব্যবহার করেছিলেন।
এই বিতর্কের মধ্যেই, অন্য একজন ফেডারেল বিচারক, যিনি অবৈধভাবে এল সালভাদরে এক ব্যক্তিকে বিতাড়িত করার সাথে জড়িত একটি মামলার শুনানি করছেন, প্রশাসনকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পালনের পদক্ষেপগুলো বিস্তারিতভাবে জানাতে বলেছেন।
বিচারক, কর্মকর্তাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে জানতে চেয়েছেন, তাঁরা কি সত্যিই কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করার চেষ্টা করেছেন, যিনি বিতাড়ন থেকে সুরক্ষার যোগ্য ছিলেন?
এই দুটি মামলার রায়, ফেডারেল বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে হোয়াইট হাউসকে তাদের আদালতের আদেশ অমান্য করার প্রবণতা এবং আইনি ব্যবস্থার সীমা পরীক্ষার জন্য জবাবদিহি করার একটি চলমান প্রচেষ্টার অংশ।
বোয়াসবার্গের তত্ত্বাবধানে থাকা মামলার মূল বিষয় হলো, ট্রাম্প প্রশাসনের ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’-এর অধীনে বিতাড়ন বন্ধের জন্য জারি করা তাঁর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন।
প্রশাসন বিমানের ফ্লাইটগুলো ফেরত না এনে যুক্তি দিয়েছিল যে, বিচারক মৌখিকভাবে এই নির্দেশ দিলেও, তাঁর লিখিত আদেশে তা অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
পরবর্তী শুনানিতে, ট্রাম্প প্রশাসনের আইনজীবীরা আরও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, যদি বোয়াসবার্গের লিখিত আদেশেও এই নির্দেশ থাকত, তবে বিতাড়ন ফ্লাইটগুলো ততক্ষণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমা ত্যাগ করে ফেলেছে, যা বিচারকের এখতিয়ারের বাইরে ছিল।
বিচারক বোয়াসবার্গ এই যুক্তির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত কোনো পক্ষ আদালতের আদেশের সম্ভাব্য অযোগ্যতাকে তাদেরdefensen হিসেবে ব্যবহার করতে পারে না।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, আদালত নিয়মিতভাবে বিদেশি ভূখণ্ডে নির্বাহী বিভাগের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, এমনকি তা যদি জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়ও হয়।
আদালত আরও বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিমানের উড্ডয়ন সম্পর্কিত তথ্য গোপন করার চেষ্টা করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গোপন রাখার মতো বিষয় নয়।
এই মামলার রায়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার মধ্যেকার সম্পর্ককে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একইসঙ্গে, অভিবাসন সংক্রান্ত নীতি এবং বিতাড়ন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও এটি আলোকপাত করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান