মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিককে অন্যায়ভাবে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেছেন দেশটির একজন ফেডারেল বিচারক। ওই ব্যক্তির দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারক।
গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট এক বিতর্কিত রায়ে এই ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়। কিন্তু বিচারক পাওলা জিনিস বলেছেন, এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেল-এর সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি সংবাদ সম্মেলন, যেখানে তারা কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে মুক্তি দেওয়া হবে না বলে ঠাট্টা করেছিলেন, তা কোনোভাবেই আদালতের নির্দেশ পালন হিসেবে গণ্য করা যায় না।
বিচারক জিনিস আরও বলেন, “আজ পর্যন্ত কিছুই করা হয়নি।” তিনি জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা সুপ্রিম কোর্টের রায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা আদালতের নির্দেশকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে বলছেন, অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা তাদের নেই।
আদালতে শুনানিতে বিচারক জিনিস প্রশাসনকে নির্দেশ দেন, অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের নেওয়া পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে হলফনামা আকারে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিস্তারিত জানাতে হবে। সাধারণত, এমন দ্রুত সময়ের মধ্যে কোনো মামলার তথ্য চেয়ে পাঠানোর ঘটনা বিরল। বিচারকের এই পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায়, তিনি এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে আগ্রহী।
আদালতে মূলত এই বিষয়টির ওপর জোর দেওয়া হয় যে, সুপ্রিম কোর্ট অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে “ফেরত পাঠাতে সহায়তা” করার জন্য যে নির্দেশ দিয়েছে, তার সংকীর্ণ ব্যাখ্যা দিচ্ছে প্রশাসন। অথচ অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর কথা ছিল না।
শুরুতে প্রশাসন স্বীকার করেছিল যে, অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার ফেরত পাঠানো একটি প্রশাসনিক ভুল ছিল। কিন্তু পরে তারা জানায়, দেশের অভ্যন্তরীণ বাধা দূর করা ছাড়া, তাকে ফিরিয়ে আনার মতো কোনো ক্ষমতা তাদের নেই। এমনকি, আদালত প্রেসিডেন্টকে এর বেশি কিছু করার নির্দেশ দিতে পারে না বলেও তারা দাবি করে।
প্রশাসনের আইনজীবী ড্রু এনসাইন শুনানির আগে দাখিল করা আইনি নথিতে আরও বলেছিলেন, অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে যদি যুক্তরাষ্ট্র ফিরিয়েও আনে, তাহলে বিচার বিভাগ তাকে অন্য কোনো দেশে ফেরত পাঠাবে অথবা এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার পদক্ষেপ নেবে।
তবে বিচারক “সহায়তা করা” শব্দটির সংকীর্ণ ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, শব্দটির সাধারণ অর্থ হলো কর্মকর্তাদের অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) আগে এই বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের অবস্থান নিয়েছে।
বিচারক জিনিস বলেন, “আপনার ব্যাখ্যা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আমার তথ্য প্রয়োজন।”
প্রশাসন যুক্তি দেয়, ট্রাম্প যখন এই মামলার বিষয়ে কথা বলেছিলেন এবং বুকেল প্রশ্ন করেছিলেন যে, অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে সীমান্ত পার করতে হবে কিনা, তখন তারা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পালনের চেষ্টা করেছিল। এনসাইন আরও যুক্তি দেন, বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে উত্থাপিত হয়েছে।
তবে বিচারক এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট হননি। তিনি বলেন, “এটি সরাসরি কোনো উত্তর নয়। কাউকে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করার কৌতুকও এর অন্তর্ভুক্ত নয়। যদি আপনি অভ্যন্তরীণ বাধা দূর করতেন, তাহলে পাচারের প্রশ্নই আসত না, তাই না? যেন দুটি ভুল পথে চলা জাহাজ রাতের আঁধারে একে অপরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল।”
বিচারক অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার আইনজীবীকে বুধবারের মধ্যে প্রশাসনের কাছে জানতে চাওয়ার জন্য প্রশ্ন তৈরি করতে বলেন যে, তারা কী পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি জানান, তারা আইসের শীর্ষ কর্মকর্তা রবার্ট সেরনা এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত জেনারেল কাউন্সেল জোসেফ মাজারাসহ ছয়জন কর্মকর্তাকে জেরা করতে পারবেন।
বিচারক এনসাইনকে বলেন, “ছুটি বাতিল করুন। অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করুন। আমি সাধারণত আমার আদালতে এ বিষয়ে ভালো করি, কিন্তু এবার নয়।”
শুনানির পর অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার আইনজীবী রিনা গান্ধী এই শুনানিকে জয় হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে তিনি যোগ করেন, “আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আমরা কিলমারকে এখনো ঘরে ফিরিয়ে আনতে পারিনি, তবে আমরা সংশ্লিষ্টদের জেরা করতে পারব এবং প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারব।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, প্রশাসন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে। গান্ধী বলেন, “এই মামলায় সরকার বেআইনিভাবে – এবং তারা নিজেরাই স্বীকার করেছে – এই ব্যক্তিটিকে, তার বাড়ি থেকে, তার পরিবার থেকে, তার সন্তানদের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও তাদের ফিরিয়ে আনার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান