অবশেষে সুর নরম! বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে সরে আসার ইঙ্গিত ট্রাম্পের?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন বাদে অন্যান্য দেশের উপর শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন, যা আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা এবং মন্দার আশঙ্কার মধ্যে নেওয়া হয়। যদিও এই পদক্ষেপের ফলে কিছু সময়ের জন্য বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারে ইতিবাচক প্রভাব দেখা গিয়েছিল, তবে বাণিজ্য যুদ্ধ এখনো পুরোপুরি থামেনি।

তখনকার সময়ে ট্রাম্প সরকার ঘোষণা করে, যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি, তাদের উপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক বহাল থাকবে। এই ছাড় জুলাই মাস পর্যন্ত কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।

তবে, এর মধ্যেই চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তাই ট্রাম্প সরকার চীনের রফতানির ওপর শুল্ক ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। একইসঙ্গে, মেক্সিকো এবং কানাডার উপরেও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসে, যা আমেরিকার ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পর ওয়াল স্ট্রিটে শেয়ার বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়। এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক ৮ শতাংশ এবং ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ৬.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলা হয়েছিল।

অন্যদিকে, চীন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। চীন সরকার যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানির উপর শুল্ক ৩৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশ করার ঘোষণা দেয়। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই পদক্ষেপকে ‘ভুল’ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়মের লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের বাজারে মার্কিন পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়। এই শুল্কের আওতায় কৃষি পণ্য এবং রিপাবলিকান প্রভাবিত রাজ্যগুলো থেকে আসা পণ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইইউ মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কগুলো অন্যায় এবং উভয় পক্ষের অর্থনীতি ও বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।

শেয়ার বাজারের অস্থিরতা এবং বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা আসার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল। অনেক বিশেষজ্ঞ এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ওয়াল স্ট্রিটের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব জেমি ডিমন সতর্ক করে বলেছিলেন, শুল্ক সংক্রান্ত সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা না হলে মন্দা একটি ‘সম্ভাব্য পরিণতি’।

এই পরিস্থিতিতে, অনেক বড় মার্কিন কোম্পানিও তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিল। বিশ্বের বৃহত্তম খুচরা বিক্রেতা ওয়ালমার্ট জানিয়েছিল, নতুন শুল্কের কারণে তাদের মুনাফা অনুমান করা কঠিন হয়ে পড়ছে। ডেল্টা এয়ারলাইন্স তাদের বার্ষিক আর্থিক পূর্বাভাস প্রত্যাহার করে নেয় এবং ভোক্তাদের আস্থা কমে যাওয়ার কথা জানায়।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার যদিও দাবি করে আসছিল যে তারা ‘সাধারণ আমেরিকানদের’ স্বার্থ রক্ষা করছে, তবে এর প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশও শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা ঘোষণা করে।

এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিবিদ এবং রাজনীতিবিদরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার বলেছিলেন, শুল্কগুলো ‘সাময়িক’ কিছু নয়।

এসব ঘটনার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কেমন হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন বাজার খুঁজে বের করা এবং আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা এখন গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *