মার্কিন অর্থনীতি: ট্রাম্পের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে কি তবে বিপর্যয়?

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দার ছায়া, উদ্বেগে বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে শ্লথগতি, যা দেশটির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সদ্য প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) ঋণাত্মক হয়েছে, যা ২০২৩ সালের পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে দেশটির বাণিজ্য, কর্মসংস্থান এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কে এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।

মার্কিন বাণিজ্য দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশটির জিডিপি (বার্ষিক হারে) -০.৩% ছিল। যেখানে আগের বছর অর্থাৎ চতুর্থ প্রান্তিকে জিডিপি’র হার ছিল ২.৪%।

অর্থনীতিবিদদের ধারণা ছিল এই হার ০.৮% থাকবে, কিন্তু তার চেয়েও খারাপ ফল হয়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয় হ্রাস এবং ভোক্তাদের মধ্যে চাহিদা কমে যাওয়াকে দায়ী করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে নেওয়া কিছু নীতি-নির্ধারণী পদক্ষেপের কারণে এমনটা হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া শুল্ক নীতির কারণে অনেক ব্যবসায়ী পণ্য মজুত করতে শুরু করেন, যার ফলস্বরূপ আমদানি বেড়ে যায়। আমদানি বাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে, যা অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ নয়।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ। এর ফলে অনেক মার্কিন কোম্পানি আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্কের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আগে থেকেই পণ্য মজুত করতে শুরু করে। এছাড়াও, সরকারি ব্যয় কমাটাও জিডিপি-র ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

অন্যদিকে, ভোক্তাদের ব্যয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। সাধারণত, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ভোক্তাদের ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ৭০ শতাংশ। তবে প্রথম প্রান্তিকে এই হার ১.৮ শতাংশে নেমে আসে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৪ শতাংশ।

যদিও ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুটা বেড়েছে, তবে একে অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে না। কারণ, অনেক ব্যবসায়ী শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কায় তাদের পণ্য মজুত করেছেন।

এই পরিস্থিতিতে দেশটির শ্রমবাজার নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। এপ্রিল মাসে বেসরকারি খাতে নতুন করে মাত্র ৬২ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে মার্চে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থান কমে যাওয়া ভবিষ্যতের জন্য ভালো লক্ষণ নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক মন্দা বাংলাদেশের জন্য বেশ উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একটি বড় বাজার। দেশটির অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়লে, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, রেমিট্যান্স প্রবাহেও এর প্রভাব পড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না যে যুক্তরাষ্ট্র মন্দার দিকে যাচ্ছে কিনা। তবে পরিস্থিতি যদি দীর্ঘদিন চলতে থাকে, তাহলে তা দেশটির অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করে দেবে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতেও এর প্রভাব ফেলবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *