ট্রাম্পের বিভীষিকা! বিশ্ব নেতারা কেন এখন পালাতে চাইছে?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বিশ্বজুড়ে পপুলিস্ট রাজনীতির মোড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক কৌশল একসময় বিশ্বজুড়ে পপুলিস্ট নেতাদের কাছে অনুকরণীয় ছিল। কিন্তু তার দ্বিতীয় মেয়াদে নেওয়া কিছু বিতর্কিত পদক্ষেপ, যেমন বাণিজ্য যুদ্ধ এবং মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক, এখন অনেক রাজনৈতিক নেতার কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তারা এখন ট্রাম্পের পথ থেকে সরে আসার চেষ্টা করছেন।

কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের মতো দেশগুলোতে এর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, কানাডায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দেখা গেছে, ট্রাম্পের রাজনৈতিক আদর্শের কাছাকাছি যাওয়া নেতারা প্রত্যাশিত ফল পাননি। বরং, যারা ট্রাম্পের কট্টর নীতির বিরোধিতা করেছেন, তারা জনগণের সমর্থন লাভ করেছেন।

অস্ট্রেলিয়ার আসন্ন নির্বাচনেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা যেতে পারে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, কিন্তু ইউক্রেনকে সমর্থন করার মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

ফ্রান্সেও প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রভাবশালী নেতা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন।

জার্মানিতেও ডানপন্থী দল ‘এএফডি’ (AfD)-এর উত্থান ঘটেছে, যদিও বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো চরম ডানপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়া নিয়ে ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ থাকায় দলটির অগ্রযাত্রা সীমিত হয়েছে। এমনকি, ব্রেক্সিট পরিকল্পনাকারী নাইজেল ফারাগও ট্রাম্পের ইউক্রেন নীতি থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন।

হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের জনপ্রিয়তাও আগের চেয়ে কমেছে।

তবে, সব জায়গায় পপুলিস্টদের প্রভাব কমেনি। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির অনুসারী এবং তিনি এখনো জনপ্রিয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির চেষ্টা করছেন।

এশিয়ার দেশগুলোতেও ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানে আসন্ন নির্বাচনগুলোতে এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব পড়তে পারে। উভয় দেশের সরকারই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্রুত বাণিজ্য চুক্তি করতে চাইছে, যা তাদের ভোটারদের কাছে ইতিবাচক বার্তা দেবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাণিজ্য চুক্তিগুলো অনেক সময় কঠিন সমঝোতা দাবি করে, যা নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ ভোটারদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে। এটি ট্রাম্পের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এখন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন। তাকে ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ মোকাবেলা করতে হবে, যা দেশটির অর্থনীতিতে সংকট তৈরি করতে পারে এবং কানাডার নাগরিকদের চাকরি হারানোর কারণ হতে পারে।

এছাড়াও, কার্নিকে নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে এবং ন্যাটোর (NATO) ব্যয়সীমা পূরণ করতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটাররা পরিবর্তনের জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন, কিন্তু নতুন সরকারগুলো সবসময় তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না। মার্ক কার্নিকে এখন জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে এবং প্রমাণ করতে হবে যে তিনি ট্রাম্পের মোকাবিলা করতে পারেন।

বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বেশ অস্থির। যদিও ট্রাম্প আবারও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কিন্তু জনমত জরিপে তার জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে কম দেখা যাচ্ছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে দ্রুত পরিবর্তন আসে। যুক্তরাজ্যে স্থানীয় নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থী দল ‘রিফর্ম পার্টি’র উত্থান হতে পারে, যা ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের প্রভাব কমে আসলেও, পপুলিজম এখনো বিশ্ব রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে, এখন নেতারা ট্রাম্পের কৌশল অনুসরণ না করে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *