ক্ষমতা বাড়াতে ট্রাম্পের পদক্ষেপ, কতটা ঝুঁকিপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের সম্ভাব্য কার্যক্রম নিয়ে এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে চলছে ব্যাপক আলোচনা। তাদের প্রধান উদ্বেগের বিষয় হলো, তিনি কি যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তি, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পরিপন্থী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলতে এখানে নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা এবং বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার বিভাজনকে বোঝানো হচ্ছে। গণতন্ত্রের সুস্থ বিকাশের জন্য এই বিভাজন অপরিহার্য।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প সম্ভবত এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এর মাধ্যমে তিনি কার্যত কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে, বিচার বিভাগের ক্ষমতাকে খর্ব করে এবং নাগরিক সমাজকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সময়ে এমন কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যেমন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা বন্ধ করার চেষ্টা, বিভিন্ন কোম্পানির ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি ইত্যাদি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, ট্রাম্পের এই আগ্রাসী মনোভাব আসলে একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ। তাদের মতে, তিনি সম্ভবত প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে আরও কেন্দ্রীভূত করতে চাইছেন।
এর মাধ্যমে হয়তো তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের মূল কাঠামোকেই দুর্বল করে দিতে পারেন। যদিও প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমা নিয়ে অতীতেও বিতর্ক হয়েছে, তবে ট্রাম্পের এই প্রচেষ্টা আগের প্রেসিডেন্টদের চেয়ে ভিন্ন হতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।
এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ট্রাম্প একইসঙ্গে আইনসভা, বিচার বিভাগ, এবং নির্বাহী বিভাগের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। একইসাথে, তিনি তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, রাজ্য সরকার, এমনকি বেসরকারি সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারেন।
তবে, ট্রাম্পের এই ধরনের পদক্ষেপ কতটা সফল হবে, তা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, সুপ্রিম কোর্ট হয়তো তার ক্ষমতা বাড়ানোর পথে বাধা দিতে পারে।
আবার কারো কারো মতে, ট্রাম্পের এই ধরনের আগ্রাসী পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে নির্বাহী বিভাগের দুর্বলতা ডেকে আনবে। কারণ, সুপ্রিম কোর্ট হয়তো তার এইসব কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই ক্ষমতা বিস্তারের চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন চাপের মধ্যে রয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মেরুকরণ এবং জাতীয়তাবাদী প্রবণতা এই চাপ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে, ট্রাম্প যদি তার ক্ষমতা আরও বাড়াতে সক্ষম হন, তাহলে তা যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগের কারণ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা, যেখানে ক্ষমতার বিভাজন এবং পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণের একটি ব্যবস্থা (Checks and balances) বিদ্যমান, তা কিভাবে টিকে থাকবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে হলে, এই ধরনের ক্ষমতা বিস্তারের প্রবণতাকে প্রতিহত করতে হবে।
একইসঙ্গে, নাগরিকদেরও গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন