যুদ্ধ বন্ধের পরিবর্তে কী হলো? ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ নিয়ে চাঞ্চল্য!

ট্রাম্প-পুতিনের ফোনালাপ: ইউক্রেনে শান্তি ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা ক্ষীণ। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে হওয়া ফোনালাপ ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা আরও দূরে ঠেলে দিয়েছে।

সোমবারের এই ফোনালাপের পর এমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। আলোচনা চলাকালীন সময়ে, ইউক্রেন এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা একটি সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার জন্য ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়।

তবে রাশিয়া এখনই চূড়ান্ত চুক্তির জন্য আলোচনার ওপর জোর দেয়। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প ক্রেমলিনের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফোনালাপ শেষে ট্রাম্প জানান, ইউক্রেন এবং রাশিয়া উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি এবং যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে আলোচনা করবে, ‘যেমনটা তারা পারে’।

একইসঙ্গে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভেন্সের একটি মন্তব্যের প্রতি সমর্থন জানান, যেখানে বলা হয়েছিল, কোনো অগ্রগতি না হলে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এই আলোচনা থেকে সরে আসবে।

ট্রাম্পের এমন মন্তব্য শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে এক নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, আলোচনার ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্র হয়তো সরাসরি ভূমিকা পালন করা কমিয়ে দেবে।

তারা আরও মনে করছেন, ভ্যাটিকান এবং নতুন মার্কিন পোপ লিও’র এই বিষয়ে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, আমেরিকার সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠা করা কঠিন।

ফোনালাপের পর সাবেক জাতীয় গোয়েন্দা উপ-পরিচালক বেথ স্যানার সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমার মনে হয়, প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) পুতিনের ওপর তেমন কোনো চাপ সৃষ্টি করেননি।

দুই ঘণ্টার আলোচনা ভালো হয়েছে, তবে এর ফলাফল কী? আমরা দেখছি, পুতিন তাঁর আগের মতোই বিভিন্ন দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন।” ফোনালাপের বিষয়ে রাশিয়ার মনোভাব বেশ ইতিবাচক ছিল।

ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে এত দীর্ঘ আলোচনা সাধারণত হয় না। রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আলোচনার সময়ে কেউই ফোন বন্ধ করতে চাননি।

সোমবারের এই ফোনালাপের আগে অনেকেই ধারণা করেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। কারণ, গত সপ্তাহে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘এবার তুরস্কের সময়’ হয়েছে।

কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প এখনো পর্যন্ত রাশিয়ার ওপর তেমন কোনো চাপ সৃষ্টি করেননি। এমনকি তিনি নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতেও রাজি হননি।

ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয়ের সমালোচনা করেছেন এবং বর্তমান বাইডেন প্রশাসনের মতো সামরিক সহায়তা দিতেও রাজি নন। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক দিয়েছি… এটা খুবই দুঃখজনক।’

অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্পের সঙ্গে হওয়া আলোচনার পর এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে জানান, তিনি সোমবার ট্রাম্পের সঙ্গে দুবার কথা বলেছেন।

প্রথমবার পুতিনের সঙ্গে কথা বলার আগে এবং দ্বিতীয়বার ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে যৌথ আলোচনার সময়। জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান এবং ভ্যাটিকান, তুরস্ক অথবা সুইজারল্যান্ডে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দেন।

তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ট্রাম্প প্রায়ই বলেন, তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দেবেন।

কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁর নেওয়া পদক্ষেপগুলো তেমন ফলপ্রসূ হয়নি। বরং তাঁর সময়ে ইউক্রেন ও গাজায় সংঘাত আরও বেড়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, কাশ্মীর এবং অন্যান্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া পদক্ষেপের তুলনায় ট্রাম্পের প্রচেষ্টা বেশ দুর্বল।

পুতিনের শান্তি চাওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যের পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ট্রাম্প আসলে কতটা আন্তরিক। কারণ, পুতিন এমন শর্তে শান্তি চাইছেন, যা ইউক্রেনের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *