যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে এই সপ্তাহে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে একটি ফোনালাপ হতে পারে। এই ফোনালাপে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। জানা গেছে, রাশিয়া এখনো পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়নি।
উইটকফ সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এই সপ্তাহে দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে খুবই ভালো এবং ইতিবাচক আলোচনা হবে।” এর আগে, মস্কো জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে।
এই সময় গত মাসে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের ‘সুনির্দিষ্ট দিক’ নিয়ে আলোচনা হয়। উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারি মাসে রিয়াদে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি ছিল রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সের্গেই লাভরভ ও মার্কো রুবিও নিয়মিতভাবে যোগাযোগ রাখতে রাজি হয়েছেন। তবে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস শনিবার জানান, রুবিও ও লাভরভ ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে ‘পরবর্তী পদক্ষেপ’ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও জানান, রুবিও এবং লাভরভ ‘যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে যোগাযোগ পুনরুদ্ধার করতে একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে রাজি হয়েছেন’।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইউক্রেনে ৩০ দিনের জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রস্তাব নিয়ে সৌদি আরবের জেদ্দায় আলোচনা হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এখনো পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। যদিও তিনি নীতিগতভাবে প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন, তবে রাশিয়ার জন্য কিছু ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন’ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন।
জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, ক্রেমলিন যুদ্ধ বন্ধ করতে চাইছে না। বরং, তারা প্রথমে ‘যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান উন্নত করতে চায়’।
তিনি সতর্ক করে বলেন, পুতিন সম্ভবত যুদ্ধবিরতি চান না। পুতিন এর আগে বলেছিলেন, এই উদ্যোগটি মূলত ইউক্রেনের জন্যই উপকারী হবে, রাশিয়ার সৈন্যদের জন্য নয়।
তিনি আরও বলেন, রুশ বাহিনী বর্তমানে বিভিন্ন অঞ্চলে ‘অগ্রসর হচ্ছে’। প্রস্তাবটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে।
কিয়েভ আশা করছে, তারা রাশিয়ার কিছু অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে, যা ভবিষ্যতে আলোচনার ক্ষেত্রে তাদের সুবিধা দেবে। পুতিন জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে মস্কোর উদ্বেগগুলো নিয়ে আলোচনা করতে চান।
জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হওয়ার মাধ্যমে পুতিন ট্রাম্পের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাচ্ছেন। ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করছেন।
জেলেনস্কি আরও অভিযোগ করেন, মস্কো কীভাবে যুদ্ধ শেষ করা যায়, সে পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে না। তিনি পুতিনের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধবিরতি কিভাবে জটিল, সে বিষয়ে মিথ্যা বলার’ অভিযোগ করেন।
ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়ার ড্রোন হামলায় খারকিভ অঞ্চলের ইজুম শহরে একজন নিহত হয়েছে। ইজুম শহরটি রাশিয়ার দখলে চলে গিয়েছিল, পরে ইউক্রেনীয় বাহিনী তা পুনরুদ্ধার করে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা